
ফিঙে পাখি
গ্রামের নাম উজানডাঙা। চারপাশে মাঠ, খাল, বিল আর শাল-গজারির জঙ্গল। এই গ্রামেই বাস করত ছোট্ট ছেলেটি—নামীল। বয়স মোটে ১০, কিন্তু তার মনটা ছিল আকাশচুম্বী। বইয়ের পাতায় নয়, সে প্রকৃতির পাঠশালায় পড়ত।
নামীলের একজন প্রিয় বন্ধু ছিল—একটা পাখি, যার নাম সে নিজেই রেখেছিল "ফিঙেরাজা"।
চকচকে কালো পালক, লেজটা যেন দু’ভাগে কাটা, আর চোখে ঠিক যেন সাহসের আগুন। গ্রামের বড় বড় পাখিও যার কাছ থেকে দূরে থাকে। প্রতিদিন বিকেলে নামীল মাঠে গিয়ে ডাকত,
“আয় রে ফিঙেরাজা, আজ তোর গল্প শোনাবো।”
পাখিটাও যেন তাকে চিনে ফেলেছিল। খুঁটি, গাছের ডাল কিংবা কুঁড়েঘরের ছাদে বসে ঝুঁকে পড়ত তার দিকে। মাঝে মাঝে ডাক দিয়ে সাড়া দিত, আর আকাশে চক্কর কেটে আবার ফিরে আসত।
একদিন ঝড় উঠল। কড়কড় বজ্রপাত, বাতাসে উড়ে যাচ্ছে খড়ের চালা। নামীল কাঁদতে কাঁদতে বলল—
“আমার ফিঙেরাজা কোথায়! ঝড়ে ও না হারিয়ে যায়!”
পরদিন সকালে, ঝড় থেমে গেছে। ভেজা মাঠে রোদ পড়ছে। হঠাৎ মাথার ওপর পরিচিত ডাক— "টিঁট টিঁট!"
নামীল তাকিয়ে দেখে—তার সাহসী ফিঙেরাজা ফিরে এসেছে। ভেজা ডানা ঝেড়ে সে এসে বসল গাছের ডালে।
সে দিন থেকে গ্রামে এক কাহিনি ছড়িয়ে পড়ল—
“ঝড় আসুক, দুর্যোগ হোক, ফিঙেরাজা হারায় না।
যে পাখি সাহস শেখায়, সে কখনো পরাজিত হয় না।”
নামীল বড় হয়েছে। এখন সে শহরে থাকে, লেখাপড়া করে। তবু ছুটি পেলেই সে ফিরে আসে উজানডাঙা গ্রামে, মাঠে বসে থাকে সেই পুরনো খুঁটির পাশে। আর এখনো ফিঙেরাজা আসে…
ডাক দেয়…
আর নামীল হাসে
তাসমিম