
কবিতা
পোড়া দুপুর
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
দুপুরে রোদের রঙটা হঠাৎ অচেনা হয়ে উঠেছিল!
দিয়াবাড়ির চারপাশ থমকে গিয়েছিল-
ধ্বংসের শব্দে, আগুনের ফুলকিতে,
কান্না মেশানো করুণ এক বিস্ফোরণে।
স্কুলের উঠোনে যারা খেলছিল, তারা আর শিশু রইল না।
একটা প্রশিক্ষণ বিমান দিকভ্রান্তে নেমে এসেছিল-
ঠিক যেখানে খেলছিল ওরা নির্ভাবনায়।
মুহূর্তেই থেমে গেল সব চিৎকার, ফুলেল হাসির কলরোল,
ছিন্নভিন্ন শরীর ছড়িয়ে গেল মাটির উপরে।
ঝুঁটিতে বাঁধা ফিতা, নাম লেখা খাতা,
দুপুরের টিফিন, সব পুড়ে গেল আগুনে,
ছাই হয়ে মিলল নিঃশব্দ আহাজারিতে !
আম্মু,আব্বু নামের সেই কোমল স্বর থেমে গেল চিরতরে।
নিথর শরীর পড়ে আছে-
কারো চোখ খোলা, তবু সুনির্মল আকাশ আর দেখে না।
আগুনে ধরলে আসে দমকল-
কিন্তু বুকের গহীনে যে আগুন জ্বলে,
তাতে কে জল ঢালে?
জানা গেল শ্রেণি শিক্ষিকা ছিলেন সেখানে-
প্রিয় শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন আগুনের ভিতর-
সেখানে অগ্নিস্নানে একত্রে তারা লিখে গেল জীবনের অবসান।
নিভৃত হয়েছে বাহ্যিক আগুন, কিন্তু তার তাপ জমে আছে আমাদের ভেতরে,
চেনা মুখগুলো না চিনতে পারার যন্ত্রণায় পুড়েছে হৃদয়ের প্রান্তর!
বইয়ের পাতায় রক্তের দাগ -
হাসপাতালের গন্ধে লুকিয়ে গেছে শিশুকালের স্বপ্ন।
শব্দ নেই কোথাও-
শুধু নিশ্বাস গুনছে সবাই।
যারা বেঁচে আছে, তারাও আজ মৃতের চেয়ে কম কিসে?
প্রতিটি জলন্ত কুঁড়ির ভেতর রয়ে গেছে এক অদৃশ্য আগুন-
এই পোড়া দুপুর কেবল এক ভুল নয়।
তবু কারো কাছে জবাব চাই না,
শুধু চাই- আর কোনো মা-বাবা যেন এমন দুপুর না দেখেন !
** হৃদয় ভেঙে যায়
মাসুদ মুস্তাফিজ
কোন্ কল্পনায় তোমাদের ছবি আঁকবো শোকের হৃদয়ে
নিহতশিশুর চোখগুলো নক্ষত্রের মতোন চকচকে বাতাসে দুলছে
যে মাইলস্টোনের রক্তবাতাসে সেই আগুন আর পোড়াস্বপ্ন
দিয়াবাড়ির গায়ে প্রচ- আগুনের জ্বরবৃষ্টি,কাঁদছে বাংলাদেশ
শূন্য আকাশে আর্তনাদ এবং বৃষ্টিঝরা কান্নায় মুহ্যমান
হৃদয় ভেঙে নদী হচ্ছে তাদের সন্তান হারানো বৈভবজলে
সব নৈঃশব্দের কাছে মরা জোছনায় রাষ্ট্রীয় শোকগ্রস্ত
আমরা শোকস্তব্ধ সহ্যহীন অনুভবের ইতিহাস হচ্ছিÑ
প্রশিক্ষণ বিমান মহড়ায় সাফল্যের মৃত্যুদূত কোন্ গন্তব্যে!
আজ এই নির্বাক প্রশ্নসমুদয় তোমাদের কাছে রেখে যাচ্ছি
মৃত্যুঞ্জয় পতাকার অসহিষ্ণু বিলাপসুরে এক আগামীর বাংলাদেশে !
আমাদের ক্ষমা করো প্রিয় সন্তানেরা এই মৃত্যুলাঞ্ছিত দেশেÑ
অনিরাপত্তায় বসে আছে রক্তভুক চরম অনিশ্চয়তা
জখম কলিজা নিয়ে তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে
প্রবল ঝুঁকির বাংলা কবিতার মানচিত্র ভাঙছে ছন্দের মরমেÑনন্দে!
**
নীলঅরণ্য ছায়া
শামীম আহমদ
অন্ধ শহর, ল্যাম্পপোষ্টগুলো-
রোগাক্রান্ত আলোহীন মনে হয়,
সত্য-সাধু হাঁটেন অন্ধকারে
মুখোশের চাপে মুখের অবক্ষয়।
স্বপ্নের সাথে সওদা করে আমি
দীর্ঘ করেছি অরণ্য-ঘন রাত
বৃথা স্বপ্ন, পুষ্পমাল্য, শুধু
আঁধারের সাথে অযাচিত মোলাকাত!
ঠোঁটের বাঁকে ক্রোধ আর দ্রোহ যেন
এক হয়েছে কঠিন বোবা ¯্রােতে
এ শহর আজ খুব অচেনা লাগে
দৃষ্টিজুড়ে পুড়ছে নগর ভূত-ভবিষ্যৎ
দেখি ভবিষ্যতের নীলঅরণ্য ছায়া
কণ্ঠে তাদের অগ্নি-মৃত্যু গান
আকাশ মাটি কম্পিত এই সুরে
সুরের তালে নৃত্যে সাজে ব্রহ্মদৈত্য বাণ!
এই শহর আজ খুব অচেনা লাগে
হাজারো স্বপ্ন এখনো রাত জাগে
**
মরুবুকে জলোচ্ছ্বাস
আতাতুর্ক কামাল পাশা
সুচির কামিনী ঘ্রাণ মাহেরিনের আঁচলে মুছে
সকালের কাকলীরা ঢুকেই মাইলস্টোনে
গুলতি ছুড়তে ব্যস্ত যেভাবে সাগরে যায় ধীবরের দলে
তৌকিরের নবৌঢ়া নিঝুম মেহেদী আঁকছে হাতে বিছানায় বসে
কুহুতান শুনবে সে ঠাঁয় বসে জালানাটা খুলে
ওদিকে আসিম শিশু শেষ শক্তি দিয়ে ধরে থ্রটলের নীল উপশিরা
মুহূর্তে চেঙ্গিশ খান ঘোটকের পিঠ থেকে নেমে
লংকায় নীরোর সাথে বসে প্রীতিভোজে
লেলিহান শিখা দেয় গোলাপ জলের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে
ছুটে যায় নিশিথের রেলগাড়ি কুয়াশার বুক চিরে চিরে
ফুুলতোলা জামা আর ফিতেঅলা জুতো
ক্ষুধায় কাতর ওই কাকলীরা অবসন্ন হয়ে
ঘুমের পুরীতে যায় শীততপ্ত কাবারের তেলে
চামর দোলাতে থাকে শুকতারা পরদিন উঠে
রয়ে যায় আপাংতেয় সকালের হরলিক্স দোকানে শোকেসে।
প্যানেল হু