
হৃদরোগের কথা ভাবলেই আমাদের মাথায় প্রথমে আসে বুকব্যথার কথা। কিন্তু হৃদযন্ত্রের সমস্যার সবসময় বুকব্যথা থাকে এমন নয়। অনেক সময় বুকব্যথা ছাড়াও শরীর কিছু সংকেত দেয়, যা দুর্বল হৃদয়ের লক্ষণ হতে পারে। নিচে এমনই পাঁচটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো -
১. হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা
দুর্বল হৃদয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো হঠাৎ করে বা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্ট। দুর্বল হৃদয় ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন করতে না পারলে ফুসফুসে তরল জমে যায়, ফলে হাঁটা বা সিঁড়ি বাওয়া এমনকি শুয়ে থাকলেও নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়। অনেক সময় রাতে হঠাৎ নিশ্বাস বন্ধ হয়ে জেগে ওঠা বা একাধিক বালিশ ছাড়া ঘুমাতে না পারাও এমন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
২. নিরবচ্ছিন্ন ক্লান্তি ও দুর্বলতা
যথেষ্ট বিশ্রাম নিলেও যদি ক্লান্তি কাটে না, তবে সেটা দুর্বল হৃদয়ের লক্ষণ হতে পারে। হৃদয় যদি শরীরের প্রত্যঙ্গ ও পেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সহজ কাজেও অতিরিক্ত পরিশ্রম লাগে। আগে যেসব কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারতেন, সেগুলো এখন করতে বারবার বিরতি নিতে হচ্ছে—এটিও চিন্তার বিষয়।
৩. পা, গোড়ালি বা পায়ের ফোলা
হৃদয় যদি ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে না পারে, তাহলে শরীরে তরল জমা হতে থাকে, যা পা, গোড়ালি ও পায়ের নিচের দিকে বেশি দেখা যায়। এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে ফোলা আরও বাড়তে পারে এবং পায়ে ভারী ভাব বা অস্বস্তি তৈরি হয়। যদি ফোলাভাব পেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
৪. মাথা ঘোরা, হালকা লাগা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
হৃদয় যদি সঠিকভাবে মস্তিষ্কে রক্ত পাঠাতে না পারে, তাহলে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। ফলে মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, দুর্বল লাগা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় এসব অনুভব করলে সতর্ক হতে হবে। এটি হৃদয়ের তীব্র দুর্বলতা বা সংকেত হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দরকার।
৫. অনিয়মিত বা দ্রুত হার্টবিট (হার্ট রেট)
দুর্বল হৃদয়ের আরেকটি পরিচিত লক্ষণ হলো হার্টবিট অনিয়মিত হয়ে যাওয়া বা খুব দ্রুত চলা। অনেক সময় বুকের ভেতর ধকধকানি, ফড়ফড়ানি বা তাল হারানোর মতো অনুভব হয়, যদিও ব্যথা না-ও থাকতে পারে। এই রকম অস্বাভাবিকতা বিশ্রামে থাকলেও হতে পারে আবার শারীরিক কাজের সময়ও হতে পারে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিয়মিত এমন অনুভব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
হার্ট ভালো রাখার উপায় কী?
✅ নিয়মিত ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য ও চর্বিহীন প্রোটিন খাওয়া
✅ লবণ, চিনি ও ট্রান্স ফ্যাট কমানো
✅ সপ্তাহে অন্তত ৪–৫ দিন, ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা (চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে)
✅ ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পরিহার
✅ নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ এবং উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা
✅ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে হৃদয়ের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে
✅ চাপ কমাতে মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং বা ইয়োগা চর্চা
সানজানা