
ছবিঃ সংগৃহীত
একটি বড় দিন আসছে — যেখানে আপনিই থাকবেন সকলের দৃষ্টি কেন্দ্রে। তখন শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য খাওয়া-দাওয়াতে একটু বেশি মনোযোগ দেওয়া খুবই স্বাভাবিক। আমার জন্য, ২০২৩ সাল ছিল এমনই একটি বছর। আমি বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, আর ভাবছিলাম কী করলে নিজেকে সবচেয়ে ভালোভাবে উপস্থাপন করা যাবে।
তখনই প্রোটিন নিয়ে আগ্রহ জন্মায়। চারিদিকে প্রোটিন নিয়ে এত আলোচনা: ওজন কমাবে! শক্তি বাড়াবে! ফিট রাখবে! অনেকে তো প্রতিদিন তাদের 'ম্যাক্রো' হিসেব নিয়ে গল্প করে যাচ্ছেন! আমি ভাবলাম — চলুন দেখি এটা আমার ওপর কী প্রভাব ফেলে।
আমি নিজের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলাম — প্রতিদিন প্রায় ১০০ গ্রাম প্রোটিন। কয়েক সপ্তাহ ধরে হিসাব রাখলাম, তারপর নিজেকে একটু ছাড় দিলাম। ধীরে ধীরে এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হলো। এখন এটা ব্যতিক্রম নয়, বরং স্বাভাবিক রুটিন।
এবং ফলাফল? অসাধারণ! মানসিক ঝিমুনি কমে গেছে, এনার্জি বেড়েছে, ঘুম ভালো হয়েছে, ওয়ার্কআউট আরও কার্যকর হয়েছে। এমনকি প্রতিদিন "আজ কী খাব?" এই চিন্তাটাও অনেক সহজ হয়েছে।
প্রোটিন আসলে কী করে শরীরে?
প্রোটিন শুধু পেশি গঠনের জন্য নয়, এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া (metabolism), শক্তি উৎপাদন, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরের শক্তি ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ড. ক্যান্ডিস নাইট, যিনি একজন লংজিভিটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বলেন: "পেশি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য নয় — এটি আমাদের রক্ষা করে।"
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি প্রোটিন খান, তাদের মৃত্যুর হার কম — বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
প্রোটিনে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড (বিশেষ করে লিউসিন) শরীরের mTOR পাথওয়ে অ্যাকটিভ করে, যা পেশি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে। এই প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত চলতে থাকে — পেশি গঠিত ও ভাঙা হয়, তাই নতুন প্রোটিন দরকার হয়।
এছাড়াও, প্রোটিন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে (যেমন ঘরেলিন ও GLP-1), যা ক্ষুধা কমায়, ইনসুলিন ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মেটাবলিজম ভালো করে।
আমাদের কি আসলেই বেশি প্রোটিন দরকার?
বর্তমানে প্রোটিনের সরকারি সুপারিশ (RDA) হলো:
০.৮ গ্রাম প্রতি কেজি ওজন, অর্থাৎ ১৫০ পাউন্ড বা ৬৮ কেজি মানুষের জন্য দিনে প্রায় ৫৫ গ্রাম।
কিন্তু গবেষকরা বলছেন — এটা কেবলমাত্র প্রোটিনের ঘাটতি রোধের জন্য। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে এবং পেশি রক্ষা করতে হলে আমাদের অনেক বেশি প্রোটিন দরকার।
নতুন সুপারিশ: ১.২–১.৬ গ্রাম/কেজি ওজন, অর্থাৎ প্রতিদিন ৮০–১১০ গ্রাম প্রোটিন একজন ১৫০ পাউন্ড ওজনের মানুষের জন্য। কেউ কেউ ২.২ গ্রাম/কেজি পর্যন্ত ভালো ফল পাচ্ছেন।
তবে যারা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে, তারা “আইডিয়াল বডি ওয়েট” হিসাব করে প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ পেতে পারেন, যেন ক্যালরি সীমিত রেখে প্রোটিন ঠিকঠাক রাখা যায়।
প্রোটিন বেশি খেলেই কি ক্ষতি?
বেশ কিছু পুরনো গবেষণায় দাবি ছিল, বেশি প্রোটিন কিডনি সমস্যা, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও হাড় দুর্বলতার কারণ হতে পারে। কিন্তু ২০২৫ সালের একটি গবেষণা বলছে — প্রোটিনের সরাসরি দোষ প্রমাণ করতে খুব কমই প্রমাণ আছে।
অর্থাৎ, আপনি যদি সুস্থ থাকেন, তাহলে দৈনিক ১.২–১.৬ গ্রাম/কেজি প্রোটিন গ্রহণ নিরাপদ।
প্রতিদিনের খাবারে এটা কিভাবে বাস্তবায়ন করবো?
সবাইকে প্রতিদিন খাবার গুনে খাওয়ার দরকার নেই। তবে খাদ্যে কী পরিমাণ প্রোটিন আছে — তা জানা উপকারী।
ডা. মিখাইল ভারশাভস্কি বলেন, "খাবারের প্রোটিন কন্টেন্ট সম্পর্কে একটু ধারণা থাকলেই চলবে। প্রতিদিন ম্যাক্রো গণনা করা লাগবে না।"
আমি নিজেও দুইটা সময়ে ট্র্যাক করি:
১. রুটিন থেকে অনেক দূরে চলে গেলে।
২. নতুন রেসিপি ট্রাই করার সময়।
আজকাল আমি খাবারকে নতুনভাবে দেখি। আমার তৈরি করা মিট-সস (যেটা প্রোটিনে ভরপুর) এখন আমার প্লেটের কেন্দ্রে থাকে। আগে যেখানে এটা হতো পাস্তার টপিং, এখন সেটাই মূল খাবার।
যদি প্রোটিন ঘাটতি হয়, সাপ্লিমেন্ট?
হ্যাঁ, প্রয়োজনে প্রোটিন শেক বা সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ বা যারা চিবাতে অসুবিধা বোধ করেন, তাদের জন্য এটি ভালো সমাধান।
উল্লেখযোগ্যভাবে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে — গাছজাত প্রোটিন গ্রহণকারীরা বেশি স্বাস্থ্যকর বার্ধক্য উপভোগ করেন।
প্রোটিন কোনও ম্যাজিক নয়। কিন্তু এটা শরীরের জন্য একটা শক্তিশালী হাতিয়ার। বয়স, জীবনধারা, শারীরিক অবস্থা — সবকিছুর উপর ভিত্তি করে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বদলায়। গবেষণা আপনাকে একটা গাইডলাইন দিতে পারে, কিন্তু দিনশেষে, আপনাকেই ঠিক করতে হবে কীভাবে এটা আপনার জীবনে ফিট করে।
চেষ্টা করুন এটা ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত করতে — যেমন আমরা দিনে দুইবার দাঁত মাজি। এতে আপনি সুস্থ, শক্তিশালী এবং সক্রিয় থাকতে পারবেন আরও অনেকদিন।
মারিয়া