
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে আবারও অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর এবার নাগরিকত্ব পরীক্ষাকে আরও কঠিন এবং এইচ-১বি ভিসাব্যবস্থায় বড় সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
নাগরিকত্ব পরীক্ষা: সহজ নয়, কঠোর হবে
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিকে খুবই সহজ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা সংস্থা (USCIS)-এর নবনিযুক্ত পরিচালক জোসেফ এডলো। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরীক্ষাটি খুব একটা কঠিন নয়। সহজেই মুখস্থ করে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। এতে আইনের মূল বিষয় প্রতিফলিত হয় না।’
তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের বিগত মেয়াদে প্রস্তাবিত কঠোর সংস্করণ ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সংস্করণে নাগরিকত্ব প্রার্থীদেরকে ২০টি প্রশ্নের মধ্যে অন্তত ১২টির সঠিক উত্তর দিতে হতো। বর্তমানে ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৬টিতে সঠিক উত্তর দিলেই উত্তীর্ণ হওয়া যায়।
তবে যাদের বয়স ৬৫ বা তার বেশি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছর ধরে বৈধভাবে বসবাস করছেন, তাদের জন্য সহজ সংস্করণটি চালু থাকবে।
এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য, আবেদনকারীদের শুধুই মুখস্থ নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব, প্রশাসন এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা নিশ্চিত করা।
এইচ-১বি ভিসা সংস্কার: লটারির বদলে বেতন বিবেচনায় ভিসা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সংস্কারটি আনার পরিকল্পনা রয়েছে, তা হলো উচ্চদক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য এইচ-১বি ভিসাব্যবস্থায় পরিবর্তন। এখন প্রতিবছর লটারির মাধ্যমে ৮৫ হাজার আবেদনকারীকে এই ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যেসব কোম্পানি বেশি বেতন দিতে প্রস্তুত, তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এই পরিবর্তন আনার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে—বর্তমানে কিছু কোম্পানি কম বেতনে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়ে দেশীয় শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই বিষয়ে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও একই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের ছাঁটাই করে অনেক কোম্পানি এখনো বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে—এটা ঠিক নয়।’
তবে এডলো স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এইচ-১বি ব্যবস্থাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে এটি দেশের অর্থনীতি ও দেশীয় কর্মীদের পরিপূরক হয়, প্রতিস্থাপক নয়।’
আলোচনা-সমালোচনার মুখে পরিবর্তন পরিকল্পনা
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন অনেক অভিবাসন বিশ্লেষক। সাবেক বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ডগ র্যান্ড বলেন, ‘এইচ-১বি ভিসা ব্যবস্থাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক মেধাবী গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগ দেওয়ার প্রধান উপায়। কংগ্রেস কখনোই বেতন অনুযায়ী নির্বাচন করার অনুমতি দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেতনকে মাপকাঠি করলে প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন ব্যাহত হবে।’
এদিকে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে সিনেট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত জোসেফ এডলো, যিনি এর আগে ইউএসসিআইএস এবং বিচার বিভাগে অভিবাসন নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এই নীতিপরিবর্তনের মূল নেতৃত্বে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
রাকিব