ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

বুক জ্বালাপোড়া বা টক ঢেঁকুর? মাত্র ৫ মিনিটে স্বস্তি দেবে এই ফল!

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৭ জুলাই ২০২৫

বুক জ্বালাপোড়া বা টক ঢেঁকুর? মাত্র ৫ মিনিটে স্বস্তি দেবে এই ফল!

ছবি: সংগৃহীত

বুক জ্বালাপোড়া বা টক ঢেঁকুর (Acid Reflux) খুবই অস্বস্তিকর একটি সমস্যা, যা অনেকেই প্রায়শই অনুভব করেন। এই সমস্যা মূলত পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসার কারণে ঘটে। এর ফলে বুকে জ্বালাপোড়া, টক ঢেঁকুর, গলা জ্বালা এবং ক্ষেত্রবিশেষে কাশিও হতে পারে। তাৎক্ষণিক আরামের জন্য অনেকেই অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধের ওপর নির্ভর করেন। তবে প্রকৃতিতেও এমন একটি ফল আছে, যা মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই বুক জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি দিতে পারে!

ম্যাজিক ফল: কলা
হ্যাঁ, সেই ফলটি হলো কলা! অবাক হচ্ছেন? কলা একটি সহজলভ্য এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল, যা বুক জ্বালাপোড়া এবং টক ঢেঁকুর কমাতে অবিশ্বাস্যভাবে কার্যকর। এর পেছনে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।

কেন কলা এত দ্রুত কাজ করে?

১. প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড: কলায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড উপাদান থাকে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে সৃষ্ট জ্বালাপোড়া কমায়। এর প্রাকৃতিক ক্ষারীয় (alkaline) বৈশিষ্ট্য পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক।

২. খাদ্যনালীতে প্রতিরক্ষামূলক স্তর: কলার মসৃণ এবং নরম গঠন খাদ্যনালীর ভেতরের অংশে একটি পাতলা প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। এই স্তর পাকস্থলীর অ্যাসিড থেকে খাদ্যনালীকে রক্ষা করে, যা জ্বালাপোড়া কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. ফাইবার সমৃদ্ধ: কলায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ রাখে। সঠিক হজম অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের একটি কারণ হতে পারে, এবং কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও কার্যকর।

৪. পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম: কলায় থাকা উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে, যা হজমতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য জরুরি। এই উপাদানগুলো প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে।

কীভাবে কলা খেলে ৫ মিনিটে স্বস্তি মিলবে?
যখনই বুক জ্বালাপোড়া বা টক ঢেঁকুর অনুভব করবেন, তখনই একটি পাকা কলা (বিশেষ করে একটু বেশি পাকা কলা) নিন এবং ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান। কলার নরম প্রকৃতি এবং এর অ্যান্টাসিড গুণাগুণ দ্রুত কাজ শুরু করবে। সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই আপনি স্বস্তি অনুভব করতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

পাকা কলা বেছে নিন: কাঁচা বা আধা-পাকা কলায় স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হজম করা কঠিন হতে পারে এবং ক্ষেত্রবিশেষে গ্যাস বা বুক জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সবসময় পাকা কলা খাওয়ার চেষ্টা করুন।

খালি পেটে বা খাবারের পর: বুক জ্বালাপোড়া হলে যেকোনো সময় কলা খেতে পারেন। এটি খালি পেটে বা ভারী খাবারের পর উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর।

নিয়মিত সেবন: যারা প্রায়শই বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভোগেন, তারা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত একটি করে কলা রাখতে পারেন। এটি প্রতিরোধমূলক হিসেবেও কাজ করবে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদিও কলা একটি চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকার, তবে যদি আপনার বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা নিয়মিত বা গুরুতর হয়, অথবা এর সাথে অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ (যেমন ওজন হ্রাস, খাবার গিলতে সমস্যা, রক্ত বমি) দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বা অন্য কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে।

বুক জ্বালাপোড়ার সময় কষ্ট না পেয়ে, আজই আপনার হাতের কাছে রাখুন একটি পাকা কলা। প্রকৃতির এই সহজলভ্য ফলটি আপনাকে দ্রুত স্বস্তি দিতে পারে!

ফারুক

×