
ছবিঃ সংগৃহীত
যারা সারাক্ষণ চিন্তার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন, তাদের সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ, অতিরিক্ত চিন্তা আপনার শরীরে এমন কিছু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যা দেখতে খিঁচুনির মতো হলেও আসলে তা মানসিক চাপে সৃষ্ট।
অনেকেই কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। তবে যখন সেই উদ্বেগ একটি চক্রের মতো মাথায় ঘুরতে থাকে—অতীত, ভবিষ্যৎ আর ‘হয় যদি’ জাতীয় চিন্তার ঘূর্ণিতে মানুষ আটকে পড়ে—তখন সেটি শুধুই মানসিক সমস্যা নয়, শরীরের ওপরও পড়ে ভয়ঙ্কর প্রভাব।
এই প্রসঙ্গে মুম্বাইয়ের জসলোক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের নিউরোলজিস্ট ও নিউরোমাসকুলার ডিজঅর্ডার বিশেষজ্ঞ ডা. বিনয়া ভি. ভান্ডারি এক সাক্ষাৎকারে জানান, অতিরিক্ত চিন্তা শরীরের স্ট্রেস রেসপন্সকে সক্রিয় করে তোলে এবং অনেক সময় এটি এমন শারীরিক লক্ষণ সৃষ্টি করে যা গুরুতর রোগের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যেতে পারে।
কী হয় যখন আপনি অতিরিক্ত চিন্তা করেন?
ডা. ভান্ডারির ভাষায়, “অতিরিক্ত চিন্তা মানে শুধু ‘বেশি ভাবা’ নয়। এটি হলো বারবার নেতিবাচক চিন্তা করা—অতীত নিয়ে আফসোস বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা। একে ‘পারসেভারেটিভ কগনিশন’ বলা হয়, যেটি একবার শুরু হলে থামানো কঠিন এবং মস্তিষ্ক ও শরীরের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।”
তিনি আরও জানান, এই অবস্থায় মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট অংশ যেমন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, অ্যান্টেরিয়র সিংগুলেট এবং লিম্বিক সিস্টেম অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, যেগুলো আবেগ, মনোযোগ ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মস্তিষ্ক সারাক্ষণ সতর্ক অবস্থায় থাকে এবং পরিষ্কারভাবে চিন্তা করা বা বিশ্রাম নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
শরীরেও পড়ে প্রভাব
মনের চাপ শরীরকেও ছাড়ে না। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। এতে ঘুমের ব্যাঘাত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, হজমে সমস্যা, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডা. ভান্ডারি বলেন, “অনেক সময় রোগী এমন কিছু লক্ষণ নিয়ে আসেন যা আসলে মানসিক চাপের কারণে শরীরে প্রকাশ পাচ্ছে। এক যুবক বারবার হাতে-পায়ে ঝিনঝিন ধরা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। তিনি ভেবেছিলেন তার স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা হয়েছে। তবে সব রিপোর্ট স্বাভাবিক আসে। পরে দেখা যায় মূল কারণ ছিল অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।”
একইভাবে এক তরুণী খিঁচুনি জাতীয় উপসর্গ নিয়ে আসেন। পরে জানা যায়, এটি আসলে মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ। এটি ‘সোমাটোসেনসরি অ্যামপ্লিফিকেশন’ নামক একটি অবস্থার উদাহরণ, যেখানে মস্তিষ্ক সাধারণ দেহের অনুভূতিকে (যেমন বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা) বিপজ্জনক মনে করে।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
ডা. ভান্ডারির পরামর্শ অনুযায়ী, অতিরিক্ত চিন্তা থামাতে প্রথম ধাপ হলো মানসিক সহায়তা নেওয়া। সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে কগনিটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপি (CBT), যা নেতিবাচক চিন্তার ধরন চিহ্নিত করে এবং তা পরিবর্তনের কৌশল শেখায়।
এছাড়াও সাহায্য করতে পারে:
মাইন্ডফুলনেস ও শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম
ভাবনাগুলো ডায়েরিতে লেখা, যাতে মানসিক চাপ কমে
রাতের বেলা স্ক্রিন টাইম কমানো
নিয়মিত ব্যায়াম, যা মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া, যদি প্রয়োজনে
অতিরিক্ত চিন্তা যখন দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন তা এক ধরনের মানসিক ফাঁদে পরিণত হয়। তবে যথাযথ সহায়তা এবং মানসিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস
নোভা