
ছবি: সংগৃহীত।
ইসরায়েল রোববার (২৭ জুলাই) ঘোষণা দিয়েছে, গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ রাখা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া গাজাবাসীর দুর্ভিক্ষের করুণ ছবি ও ভিডিওর প্রেক্ষাপটে এ ঘোষণা এল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত গাজার আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা শহরের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।
এছাড়াও, রোববার থেকে সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার ও ওষুধবাহী ট্রাকের জন্য সুরক্ষিত রুটও চালু থাকবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহার ও অপুষ্টিতে ১২৭ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
গত শনিবার, মাত্র পাঁচ মাস বয়সী জয়নাব আবু হালিব নামের এক শিশুকন্যা খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে তীব্র অপুষ্টিতে মারা যায়। তার মা ইসরা আবু হালিব বলেন, “তিন মাস হাসপাতালে কাটালাম, আর এখন আমার কোল ফাঁকা। সে আর নেই।”
রোববার মিশরের রেড ক্রিসেন্ট সংস্থা জানিয়েছে, তারা ১২০০ মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা নিয়ে ১০০টির বেশি ট্রাক পাঠিয়েছে গাজার দক্ষিণে কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে।
এর আগে ইসরায়েলও গাজায় আকাশপথে ত্রাণ ফেলা শুরু করেছে বলে জানায়, যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নয়ন ঘটাবে বলে দাবি তাদের। তবে সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষুধা ও অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
এই চাপের মধ্যেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে, গত শুক্রবার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আর আগ্রহী নয়, কারণ হামাস একটি চুক্তি চায় না বলে তাদের বিশ্বাস।
জাতিসংঘ গত সপ্তাহে বলেছিল, সামরিক কার্যক্রমে বিরতি দিলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে গতি আসবে। তবে ইসরায়েল সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প রুট না দেওয়ায় জাতিসংঘের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ইসরায়েল অবশ্য বলছে, তারা গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তবে সেটি যাতে হামাসের হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।
এই সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসরায়েলের উগ্র-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা শনিবার তার অজ্ঞাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“এই সিদ্ধান্ত হামাসের ধোঁকাবাজি ও প্রচারণার কাছে আত্মসমর্পণ,” বলেন বেন-গভির। তিনি আবারও গাজায় সমস্ত সহায়তা বন্ধের দাবি জানান এবং গাজা দখল করে ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে তাড়ানোর আহ্বান জানান, যদিও সরকার ছাড়ার হুমকি দেননি।
মে মাসে সীমিত সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পর, ইসরায়েল দাবি করেছিল গাজায় যথেষ্ট খাদ্য রয়েছে, তবে জাতিসংঘ তা বিতরণে ব্যর্থ হচ্ছে। জাতিসংঘ পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলি বিধিনিষেধের মধ্যেও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের নেতৃত্বে যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।
এর জবাবে ইসরায়েলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। পুরো গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় পুরো জনগণ বাস্তুচ্যুত।
সূত্র: রয়টার্স।
মিরাজ খান