
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক মহলের চাপে অবশেষে চরম অমানবিক অবস্থান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হলো ইসরাইল। ঘনবসতিপূর্ণ তিনটি এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে হামলা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ। পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে পাঁচ ঘণ্টার জন্য নিরাপদ রুট নিশ্চিত করার আশ্বাসও দিয়েছে তারা।
দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ও বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে গাজা উপত্যকায় এখন এয়ারড্রপ পদ্ধতিতেও ত্রাণ ফেলছে ইসরাইলি সেনারা।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—হাজার বছরের ইতিহাসে এমন বর্বরতা আর কবে দেখেছে বিশ্ব? নির্বিচার বোমা হামলায় মানুষ তো মরছেই, কিন্তু এখন ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রেখেও হত্যা করা হচ্ছে। উপত্যকা জুড়ে খাবারের জন্য চলছে হাহাকার। চোখের সামনে না খেয়ে সন্তানদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখছেন অসহায় বাবা-মায়েরা।
গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে জেনেও সন্তানদের মুখে এক ফোঁটা খাবার তুলে দিতে গুটিকয়েক ত্রাণ কেন্দ্রে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো মানুষ।
একজন জানান, “সন্তানদের জন্য খাবার পেতে ভোর থেকে অপেক্ষা করছি। আমার স্বামী এক বছর ধরে ইসরাইলি কারাগারে বন্দি। আমার ওপরই পরিবারের সাত সদস্য নির্ভরশীল। সন্তানরা খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। সবাই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি পান করার মতো পানিও পাচ্ছি না। আমার সন্তানের বয়স মাত্র আড়াই বছর। ক্ষুধার জ্বালায় সে কাঁদছে, তার মুখে এক ফোঁটা পানিও দিতে পারছি না।”
মাসের পর মাস ধরে গাজায় লাখো ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির আহ্বানেও এতদিন গলেনি নেতানিয়াহু প্রশাসন। বরং নিজেদের ব্যবস্থাপনায় "ত্রাণ" দেওয়ার নামে শুরু করেছে এক নতুন হত্যাযজ্ঞের মিশন।
তাদের এই বর্বর আচরণে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এমনকি ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইউরোপের বহু দেশও এবার চুপ থাকতে পারেনি।
চাপের মুখে এবার নিজেদের অমানবিক অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে আসতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। গণবসতিপূর্ণ তিনটি এলাকায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী।
প্রাথমিকভাবে আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালা এবং গাজা সিটিকে এই ঘোষণার আওতায় রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণ প্রবেশের জন্য সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নির্ধারিত “নিরাপদ রুট” নিশ্চিত করার কথাও বলেছে তারা।
তবে ফিলিস্তিনিরা এই ঘোষণাকে নিছক কৌশল বলে মনে করছেন। কেননা, এর আগেও “নিরাপদ অঞ্চল” ঘোষণা করে ইসরাইল বহুবার সেখানে নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়েছে।
এদিকে অনাহারে মৃত্যুর মিছিল দিনকে দিন দীর্ঘ হওয়ায় তড়িঘড়ি করে গাজায় বিমান থেকে এয়ারড্রপের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে আইডিএফ। পাশাপাশি কার্নি সালেম ক্রসিং দিয়ে মিশর থেকে কয়েক মাস পর প্রথমবারের মতো কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
তবুও, এই ত্রাণ প্রবেশে কিছুটা সুযোগ তৈরি হলেও, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইসরাইলের ওপর আস্থার সংকট এখনো কাটেনি।
শেখ ফরিদ