
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশে বিক্রি করা চটপটি, ছোলা-মুড়ি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরা শরবত ও সালাদে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) করা এক গবেষণায় এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭টি জোন থেকে এসব খাবারের ৪৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিশে^র সব বড় বড় শহরেই স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার জনপ্রিয়, তবে একমাত্র ঢাকা বাদে আর কোনো শহরের এ জাতীয় খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির্পূণ নয়। ঢাকার পথখাবার নিয়ে নানা সমীক্ষা হয়, পরামর্শ ও সুপারিশ উঠে আসে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না যথাযথ তদারকির অভাবে। ফলে নানা বয়সী মানুষ এসব খাবার গ্রহণ করে ডায়রিয়াসহ নানা অসুখে ভোগেন।
দূষিত পানি, নোংরা গামছা, অপরিষ্কার হাত, ধুলাবালিময় পরিবেশের কারণে এই ধরনের জীবাণু খাবারে মিশে যাচ্ছে। বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সম্পর্কে জ্ঞান-ধারণা কম থাকায় খাবার ও জুসে জীবাণু ঢুকে যাচ্ছে।
প্রায় এক দশক আগে এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, ঢাকায় ১০ হাজারেরও বেশি স্ট্রিট ফুড বা পথখাবার বিক্রেতা রয়েছে। এক দশক পরে সন্দেহাতীতভাবে সংখ্যাটি বেড়েছে। সে সময়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআরবির গবেষণায় পথখাবারে জীবাণুর হার দেখা গিয়েছিল ৫৫ শতাংশ। তার দু’বছর পর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে তা উঠে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশে। যেখানে বেশির ভাগই পাওয়া গেছে স্কুলের সামনের পথখাবারে। স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। যদি সত্যি সত্যি অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে শিশুদেরকে বাঁচাতে চাই, তবে নিয়মিত তদারকি ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পথখাবার তৈরি ও বিক্রির ওপর নির্ভরশীল ঢাকার হাজার হাজার পরিবার। তাদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসাটাই হবে নিরাপদ পথখাবার সংস্কৃতির প্রাথমিক পদক্ষেপ। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তাদের প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে পরিস্থিতির যে উন্নতি হবে, এটা সাধারণভাবে বলা যায়, আমাদের শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে কোনো অবহেলা নয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ডায়রিয়া রোগী বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সচেতনতা ও সতর্কতা প্রয়োজন। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় খাবারের পানি সরবরাহ করে থাকে ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির পানির মান নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ আছে। ডায়রিয়া মোকাবিলায় এসএমসির ওর স্যালাইন অত্যন্ত কার্যকর। ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের মোকাবিলা করা মোটেই অসম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন বিশেষ ঋতুতে বাড়তি স্বাস্থ্য সচেতনতা, পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করা। পানি পানে বিশেষ সতর্কতাই কাম্য। মোটকথা মানুষকে কেবল সচেতন করা নয়, তার প্রয়োজন মোতাবেক বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তাও রাষ্ট্রকে দিতে হবে।
প্যানেল/মো.