ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

চ্যাটজিপিটি ॥ সৃজনশীলতার অগ্রযাত্রা না কি অবসান?

ড. ইকবাল আহমেদ

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ২৭ জুলাই ২০২৫

চ্যাটজিপিটি ॥ সৃজনশীলতার অগ্রযাত্রা না কি অবসান?

বর্তমান যুগকে প্রযুক্তিনির্ভর যুগ বলা হলেও তা আর কেবল প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়, এখনকার যুগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)-র যুগ। এই বুদ্ধিমত্তার এক যুগান্তকারী রূপ হচ্ছে ‘চ্যাটজিপিটি’। ওপেনএআই (OpenAI) কর্তৃক উদ্ভাবিত এই চ্যাটবটটি ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে একদিকে যেমন এটি আমাদের কাজকে সহজতর করে তুলেছে, জ্ঞান আহরণে সহায়ক হয়েছে, ঠিক তেমনি অন্যদিকে এটি নিয়ে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে- এই প্রযুক্তি কি আমাদের সৃজনশীলতা ধ্বংস করছে না তো?
মূলত চ্যাটজিপিটি হচ্ছে একটি ভাষাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটবট, যা বিশাল পরিমাণ পাঠ্য ডেটা বিশ্লেষণ করে মানুষের মতো করে প্রশ্নের উত্তর দিতে, লেখালেখি করতে, সমস্যার সমাধান দিতে ও আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। GPT (Generative Pre-trained Transformer) মডেলের ভিত্তিতে তৈরি এই চ্যাটবটটি ২০২২ সাল থেকেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে।
চ্যাটজিপিটির উপকারিতা ও প্রয়োগিক দিকসমূহ
চ্যাটজিপিটি ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনে দিয়েছে। একে শুধু একটি প্রশ্নোত্তর বট না ভেবে বরং একটি ভার্চুয়াল সহকারী, শিক্ষক, পরামর্শক ও লেখক হিসেবে ভাবা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী তার থিসিস লেখার জন্য বারবার গুগলে খুঁজেও কাক্সিক্ষত তথ্য না পেয়ে সে চ্যাটজিপিটিতে নিজের গবেষণার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে প্রশ্ন করলে, চ্যাটজিপিটি তাকে নির্দিষ্ট রিসার্চ মডেল, ডেটা কালেকশন মেথড এবং প্রয়োজনীয় থিওরি সাজেস্ট করে দেয়। এতে সে তার থিসিসে দ্রুত অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে একটি ডিজিটাল মার্কেটিং ফার্মের কনটেন্ট লেখক মাইক্রোকপির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে প্রতিদিন নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট লিখে থাকেন। নির্দিষ্ট ক্যাম্পেন ব্রিফ অনুযায়ী চ্যাটজিপিটির কাছে সাহায্য চাইলে, এটি তার জন্য ১০-১২টি আকর্ষণীয় হেডলাইন সাজেস্ট করে দেয়। এতে সময় ও পরিশ্রম দুই-ই সাশ্রয় হয়।
শুধু লেখালেখিতেই নয়- একজন আইটি প্রফেশনাল জাভাস্ক্রিপ্টে, পাইথনে কোডিং করতে গিয়ে একটি ত্রুটিতে পড়ে যান। তিনি চ্যাটজিপিটিকে সমস্যার বর্ণনা দিয়ে কোড শেয়ার করলে, এটি সঙ্গে সঙ্গে সমাধান ব্যাখ্যা করে সংশোধিত কোড দেয়। এ ধরনের বাস্তব ব্যবহারিক সুবিধা প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাক বা না থাক, চ্যাটজিপিটি যে কোনো ব্যবহারকারীকে জ্ঞানের সমতা এনে দিচ্ছে।
এছাড়াও চ্যাটজিপিটি লেখক ও উদ্যোক্তাদের নতুন উদ্যোগ পরিকল্পনায় সহায়তা করে। কেউ যদি নতুন স্টার্টআপ শুরু করতে চান, তিনি চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে মার্কেট অ্যানালাইসিস, বিজনেস মডেল ক্যানভাস, SWOT বিশ্লেষণ ইত্যাদির খসড়া তৈরি করতে পারেন।
চ্যাটজিপিটির সম্ভাব্য অপব্যবহার
যেমনটা বলা হয়, ‘প্রযুক্তি নিজের মতো করে ভালো বা মন্দ নয়, এর ব্যবহারই সেটাকে সংজ্ঞায়িত করে’- চ্যাটজিপিটির ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। যদিও এটি একটি শক্তিশালী সহায়ক টুল, তবু অসতর্ক বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহারে এর অনেক নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা হলো, শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্ক বা অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সময় নিজেরা কোনো চিন্তা না করে সরাসরি চ্যাটজিপিটির তৈরি কনটেন্ট জমা দিচ্ছে। সবাই চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করে একই প্রশ্নের একই উত্তর লিখছে। এতে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও মৌলিক চিন্তাধারার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্লগার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটররা চ্যাটজিপিটির লেখা কনটেন্ট সরাসরি ব্যবহার করে নিজেদের নামে প্রকাশ করছে, অথচ এসব কনটেন্টের তথ্য কতটা নির্ভরযোগ্য তা যাচাই করছে না। এতে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে এবং মৌলিক লেখকদের মূল্যায়ন দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।
এছাড়াও চ্যাটজিপিটি ভুয়া তথ্য বা  'hallucination' সমস্যা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ কখনো কখনো এটি বিশ্বাসযোগ্যভাবে ভুল তথ্য তৈরি করে, যেমন- ভুয়া বইয়ের নাম বা ভুয়া গবেষণার রেফারেন্স। এটি কেউ যাচাই না করে ব্যবহার করলে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোন এক সাংবাদিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেন চ্যাটজিপিটির সহায়তায়, কিন্তু পরে দেখা যায় সেই সংস্থার বক্তব্যটি বানানো ছিল।
আরও উদ্বেগজনক দিক হলো, শিক্ষার্থীরা চ্যাটজিপিটি দিয়ে অল্প সময়েই প্রবন্ধ, কুইজের উত্তর বা এমনকি গবেষণা প্রস্তাবনা তৈরি করে ফেলছে, যা এক ধরনের অ্যাকাডেমিক ডিসঅনোস্টি। এই প্রবণতা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ, কারণ এটি একটি প্রজন্মকে পরিশ্রম ছাড়াই ফলাফল পাওয়ার দিকে ধাবিত করছে।
চ্যাটজিপিটি কি সৃজনশীলতা ধ্বংস করছে?
এটাই সবচেয়ে বিতর্কিত ও চিন্তার বিষয়। চ্যাটজিপিটি আমাদের চিন্তা করে লেখার, গবেষণা করার বা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার যে প্রবণতা তা যেন ধীরে ধীরে নিস্তেজ করে দিচ্ছে। কিন্তু আসল সত্য হলো এটি মানুষকে সৃজনশীলতার সুযোগ করে দিতে পারে, যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ একজন কবি চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে কবিতার ছন্দের ধরন, অলঙ্কারের ধরন, বা থিম সাজেস্ট করতে পারেন। এরপর নিজে সেই থিমে কবিতা লেখেন। এতে করে তিনি সময় বাঁচান, আবার মৌলিকতাও বজায় থাকে।
তবে বিপরীত উদাহরণও আছে। অনেকে কেবল কবিতা লিখে দিতে বলছে চ্যাটজিপিটিকে এবং তা হুবহু নিজের নামে ফেসবুকে বা ওয়েবসাইটে পোস্ট করছে- এখানেই সৃষ্টি হচ্ছে সমস্যার। এতে করে মানুষ নিজেই নিজের সৃজনশীলতাকে অবমূল্যায়ন করছে। একজন শিক্ষার্থী যদি চ্যাটজিপিটি দিয়ে প্রতিবারই থিসিস বা গবেষণা-প্রবন্ধ লেখে, তাহলে তার নিজের চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস পাবে। আর একজন লেখক যদি প্রতিটি কনটেন্টে চ্যাটজিপিটির মুখাপেক্ষী হন, তাহলে একসময় তার নিজস্ব লেখার ভঙ্গি হারিয়ে যাবে।
তবে এটাও বলা দরকার, সৃজনশীলতা কেবল একমুখী নয়। প্রযুক্তির সহযোগিতায় নতুন ধরনের সৃজনশীলতা গড়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ এক ব্যক্তি চ্যাটজিপিটির সাহায্যে একটি ছোট গল্পের প্লট তৈরি করেন, এরপর সেটিকে নাট্যরূপ দেন নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও ভাষায়। এখানে প্রযুক্তি তার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, সৃজনশীলতা ধ্বংস করেনি।
অতএব, চ্যাটজিপিটি সৃজনশীলতার শত্রু নয়, যদি ব্যবহারকারী এটি কীভাবে ব্যবহার করবেন তা নিয়ে সচেতন থাকেন। ‘চিন্তাহীন অনুসরণ নয়, বরং প্রযুক্তিকে চিন্তাশীল সহযোগী হিসেবে গ্রহণই হতে পারে উত্তম পথ’।
একজন আইটি বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি
চ্যাটজিপিটির মতো একটি ভাষাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের প্রথম যে জিনিসটি বোঝা প্রয়োজন তা হলো- এটি কোনো অলৌকিক বা মিরাকল যন্ত্র নয়, বরং এটি একটি ভাষা মডেল যা মানুষের তৈরি ডেটার ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত। এর জ্ঞান সীমিত, এটি বাস্তব সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে না এবং কখনো কখনো ভুলও করে। তাই এর ওপর অন্ধভাবে নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
ব্যক্তিগতভাবে একজন আইটির মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে হবে একটি সহায়ক হাতিয়ার (assistive tool) হিসেবে, প্রাথমিক খসড়া বা ধারণা পাওয়ার জন্য- not as a final solution. যেমন, কোড লেখার সময় চ্যাটজিপিটি নির্দিষ্ট ফাংশনের কাঠামো বা উদাহরণ দিতে পারে, কিন্তু সেই কোডকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী যাচাই, পরীক্ষা ও নিরাপদ করে তোলার দায়িত্ব একান্তভাবেই প্রোগ্রামারের। একইভাবে, কেউ যদি একটি প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন তৈরির উদ্দেশ্যে চ্যাটজিপিটির সাহায্য নেয়, তবে তাকে অবশ্যই তথ্য যাচাই করতে হবে, কনটেন্ট সম্পাদনা করতে হবে এবং নিজের ভাষা ও চিন্তার ছাপ রাখতে হবে।
এছাড়া এটির সঠিক ব্যবহার পদ্ধতির অন্যতম ভিত্তি হলো প্রশ্ন করার দক্ষতা (prompt engineering)। আপনি যত নির্দিষ্টভাবে ও প্রসঙ্গ অনুযায়ী চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করবেন, তত ভালো মানের উত্তর পাবেন। যেমন, আপনি যদি শুধু ‘একটি রিপোর্ট লিখ’ বলেন, তাহলে সাধারণ কিছু পাবেন। কিন্তু আপনি যদি বলেন, ‘বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টরের উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি ৫০০ শব্দের রিপোর্ট লিখ যা নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রাসঙ্গিক’- তবে আপনি অনেক বেশি কাক্সিক্ষত ও প্রাসঙ্গিক ফলাফল পাবেন।
চ্যাটজিপিটি উদ্ভূত তথ্য যাচাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি অনেক সময় ব্যবহারকারীদের দেখি চ্যাটজিপিটি যে কোনো তথ্য দিলে সেটিকেই চূড়ান্ত ধরে নেয়। অথচ চ্যাটজিপিটি বহু ক্ষেত্রেই hallucination নামক সমস্যায় ভোগে- যেখানে এটি এমনকি ভুয়া বই, স্ট্যাটিসটিকস বা গবেষণাপত্র তৈরি করে। তাই আপনি যদি গবেষণামূলক বা নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান, তাহলে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য যাচাই করে নিতে হবে।
একইভাবে একাডেমিক বা অফিসিয়াল কাজে এর ব্যবহার করতে গেলে নৈতিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য। আপনি চ্যাটজিপিটির সহায়তায় একটি আইডিয়া পেতে পারেন, কাঠামো পেতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি সেই কনটেন্ট নিজের নামে দাবি করেন, তাহলে সেটি মৌলিকতার, নৈতিকতার চরম অবমাননা। আমার মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সময় এসেছে অও-সহায়ক নীতিমালা তৈরির যেখানে শিক্ষার্থী অও ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ বা ধারণা নিতে পারবে, তবে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে এবং মৌলিক চিন্তার পরিচয় থাকতে হবে।
সবশেষে, সঠিক ব্যবহার মানেই হলো চ্যাটজিপিটিকে একজন সহযোগী, সহচর বা প্রাথমিক সহায়ক বিশ্লেষক হিসেবে নেওয়া- ভুলে চিন্তা করা যাবে না যে, এটি আপনার হয়ে সব কাজ করে দেবে, বরং এটি আপনাকে আরও ভালোভাবে ভাবতে, দ্রুত কাজ করতে ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করতে সাহায্য করবে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা: প্রযুক্তিবিদদের জন্য সম্ভাবনার পথনির্দেশ
আমরা এক অদ্ভুত, কিন্তু রোমাঞ্চকর যুগে প্রবেশ করেছি- যেখানে মানুষের চিন্তা ও যন্ত্রের বিশ্লেষণ মিলেমিশে এক নতুন ধরনের হাইব্রিড বুদ্ধিমত্তা গড়ে তুলছে। এই যুগে, আইটি পেশাজীবীদের, শিক্ষাবিদদের, নীতিনির্ধারকদের এবং সমাজবিদদের একত্রে কাজ করতে হবে এই প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের পথ তৈরি করতে।
প্রথমত, শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। কেবল চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে শেখানো নয়, বরং AI Literacy বা ‘কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ করে, এর সীমাবদ্ধতা কী এবং এর সঙ্গে কীভাবে যুক্তিসম্মতভাবে মিথস্ক্রিয়া করা যায়’- এসব শিক্ষা স্কুল পর্যায় থেকেই দেওয়া উচিত। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রযুক্তির ব্যবহারকারী নয়, প্রযুক্তির সচেতন নাবিক হয়ে উঠবে।
দ্বিতীয়ত, নীতিনির্ধারণী স্তরে এআই ব্যবহারে একটি নৈতিক ও আইনি কাঠামো (AI policy framework) গড়ে তোলা জরুরি। বিশেষ করে কনটেন্ট তৈরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংবাদমাধ্যমে AI-generated কনটেন্ট স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হওয়া উচিত। যেমন, AI দিয়ে লেখা কোনো প্রবন্ধ বা সংবাদে তা স্পষ্টভাবে ‌AI-assisted content' বলে উল্লেখ থাকা উচিত।
তৃতীয়ত, চ্যাটজিপিটি বা একই ধরনের মডেলগুলোর লোকালাইজেশন জরুরি। বাংলাদেশের মতো দেশে এই টুলগুলো বাংলা ভাষায় ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটে আরও দক্ষ ও উপযোগী করতে হবে। এতে করে স্থানীয় সমস্যার সমাধানে, উদ্যোক্তা তৈরিতে, এমনকি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও অও এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবে।
তবে এসবের পাশাপাশি আমাদের নতুন প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যারা কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, বরং প্রযুক্তিকে সহচর করে নিজের সৃজনশীলতা ও মানবিক বোধকে সমুন্নত রাখতে পারে। আগামী দিনের বিশ্বে বেঁচে থাকার জন্য শুধু কোড লেখা বা অ্যালগরিদম জানা যথেষ্ট নয়- মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণী শক্তি ও প্রযুক্তিকে নৈতিকভাবে ব্যবহার করার সক্ষমতাই হবে সবচেয়ে বড় সম্পদ।
শেষ কথা হলো, চ্যাটজিপিটি বা এআই কোনো অজেয় দৈত্য নয়- এটি কেবল একটি যন্ত্র, একটি সহায়ক প্রযুক্তি- যার উপকারিতা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর বুদ্ধিমত্তা, সততা ও মনোভাবের ওপর। ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে মানুষ ও মেশিনের যৌথ অভিযাত্রা। সঠিক ব্যবহার, নৈতিকতা এবং মানবিক বিবেচনা বজায় রেখে এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে, এটি আমাদের সৃজনশীলতাকে ধ্বংস নয়- বরং এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্যানেল/মো.

×