
ছবি: সংগৃহীত।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক পিতার অমানবিক ও ভয়াবহ সিদ্ধান্তে ছোট মেয়ে চার বছর ধরে ঘরের ভেতর তালাবদ্ধ অবস্থায় বন্দি ছিল। বড় মেয়ে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ের পর ছোট মেয়ের ক্ষেত্রেও যেন এমন কিছু না ঘটে, সেই আশঙ্কায় বাবা তাকে একরকম গৃহবন্দি করে রাখেন।
শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডলপাড়া মহল্লার বাসিন্দা এনামুল হক পেশায় ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি বাড়িতে একটি ওষুধের দোকান চালান। ৮-১০ বছর আগে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। এরপর বড় মেয়ে লিমা প্রেম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন।
২০২১ সালে ছোট মেয়ে লিজা এসএসসি পাস করার পর থেকে এনামুল তার ওপর নজরদারি বাড়ান। কোনো ছেলে বা বাইরের কারও সঙ্গে যেন যোগাযোগ না হয়, সেজন্য তার পড়াশোনাও বন্ধ করে দেন। এরপর থেকেই মেয়েটিকে তালাবদ্ধ করে রাখেন ঘরে। জানালা-দরজা সব বন্ধ করে রাখা হতো।
প্রতিবেশীরা জানান, মেয়েটির আর্তনাদ মাঝেমধ্যে শোনা যেত। কখনও তার মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে, আবার কখনও ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হতো বলে সন্দেহ স্থানীয়দের। এনামুল তার বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দিতেন না, সবসময় মূল গেট তালাবদ্ধ থাকত।
চার বছর ধরে এমন অমানবিক বন্দিত্বে থাকার ফলে মেয়েটির মানসিক ভারসাম্যও হারাতে বসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বিষয়টি পুলিশকে জানালে, পুলিশ গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে এনামুল বলেন, "আমি সকালে নাশতা করে বাইরে চলে যাই, বাড়িতে তালা দিই। আমি মেয়েকে পর্দাশীল রাখতে চেয়েছি। কিন্তু কোনো নির্যাতন বা ইনজেকশন দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা।"
আক্কেলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গণেশ চন্দ্র বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা জানতে পারি এনামুল তার মেয়েকে বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে প্রায় পাগল করিয়ে রেখেছেন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, এ বাড়িতে বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশটুকুও নেই। সামাজিক পরিবেশের অভাব রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, লিজার বাবাকে বাড়িটিতে বসবাসের সামাজিক পরিবেশ এবং মেয়েকে দ্রুত চিকিৎসার সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
নুসরাত