
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ২নং ছাগলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আজও দাঁড়িয়ে আছে নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ওপর। পরিত্যক্ত দুটি ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠ গ্রহণ করছে ২৬২ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী। যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে ভবন দুটি এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের।
১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির ভবন দুইটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৯০ ও ২০০৪ সালে। বর্তমানে দুটি ভবনই ভেঙে পড়ার উপক্রম। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে, দরজা-জানালা ভেঙে গেছে, পিলার থেকে রড বেরিয়ে গেছে, দেয়ালে ফাটল—সব মিলিয়ে পুরো স্কুল ভবন আজ এক আতঙ্কের নাম। কোথাও কোথাও মেঝেও দেবে গেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করুনা রানী হালদার বলেন, "শিক্ষার্থীরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে ক্লাস করছে, তেমনি শিক্ষকরাও প্রতিনিয়ত আতঙ্ক নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।"
স্কুলের সহকারী শিক্ষক শিরিনা আক্তার জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত, আর তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। শিক্ষক সংকট না থাকলেও শ্রেণিকক্ষ ও অবকাঠামোর ভয়াবহ সংকটে সুষ্ঠু পরিবেশে পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ, খেলার মাঠ কিংবা সুপেয় পানির উৎস। নষ্ট বাথরুম ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও রয়েছে শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহেল রানা জানায়, "মাঝে মাঝে ছাদের পলেস্তারা খসে মাথায় পড়ে। বৃষ্টির সময় মাঠে পানি জমে যায়, খেলতে পারি না।" স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর তালুকদার বলেন, "প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে হয়। দ্রুত পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি।"
শিক্ষক নেতা মো. কামরুজ্জামান বলেন, "ভবনের এই সংকটের কারণে কোমলমতি শিশুরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ই শিক্ষার ভিত্তি এখানে যদি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদভাবে বেড়ে উঠবে কিভাবে?"
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে ছাগলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করে শিশুদের জন্য নিরাপদ পাঠদান নিশ্চিত করা হোক। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, "সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দবিরউদ্দিন বলেন, "আমি সরজমিনে বিদ্যালয় ভবনটি পরিদর্শন করেছি। এটি সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রেরণ করেছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়ে আসবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভবনের সংস্কার কাজ শুরু করা যাবে।"
আঁখি