ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

তিমিদের প্রাচীন কবরস্থান ঘিরে রহস্য ও গবেষণার নতুন দিগন্ত

এলেন বিশ্বাস, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০১:০৫, ২৮ জুলাই ২০২৫

তিমিদের প্রাচীন কবরস্থান ঘিরে রহস্য ও গবেষণার নতুন দিগন্ত

ছবিসূত্র: নিকিতা ডেমিডভ, এএআরআই, আলেক্সান্ডার এরমোলভ

হিমবাহ বা বরফস্তরের নিচে কী থাকতে পারে? কল্পনাশক্তিকে যথাসম্ভব প্রসারিত করেও হয়তো বিশাল বরফস্তরের নিচে তিমি মাছের একটি কবরস্থান কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু বাস্তবে এমনই একটি কবরস্থানের দেখা মিলেছে পৃথিবীর সুমেরু (আর্কটিক) অঞ্চলে। রাশিয়ার ভূতাত্ত্বিক গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি রাশিয়ার সুদূর উত্তরে অবস্থিত উইলচেক দ্বীপে তিমি মাছের অসংখ্য হাড়গোড়সমেত প্রাচীন একটি কবরস্থান খুঁজে পেয়েছেন।

এক বিবৃতিতে রাশিয়ার আর্কটিক অ্যান্ড অ্যান্টার্কটিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এএআরআই) জানিয়েছে যে, রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা চলতি বছরের শুরুতে ইউলচেক দ্বীপে একটি গবেষণা অভিযান শুরু করে। দ্বীপটিতে তাঁরা মূলত পার্মাফ্রস্ট অধ্যয়ন করতে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, মাটি, শিলা বা পলি স্তর অন্তত দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে টানা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তার চেয়েও নিচে হিমায়িত থাকলে একে পার্মাফ্রস্ট বা ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চল বলা হয়। 

কিন্তু ‘রথ দেখতে গিয়ে কলা বেচা’র মতোই বিজ্ঞানীরা তাঁদের অভিযানে নতুন কিছুর সন্ধান পেয়েছেন। সুমেরীয় (আর্কটিক) অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত রাশিয়ার এই দ্বীপটিতে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন এমন একটি হিমবাহ বা বরফস্তর যেটি দ্রুত গলে যাচ্ছে এবং পশ্চাদপসরণ করছে। আর সে কারণেই অনাবৃত হয়েছে হিমবাহের নিচে বহু বছর ধরে জমে থাকা তিমি মাছের প্রাচীন কবরস্থানটি- যেখানে মিলেছে তিমি মাছের অসংখ্য দেহাবশেষ বা কঙ্কাল। অর্থাৎ, পার্মাফ্রস্ট গবেষণা করতে গিয়ে রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের আবিস্কার তিমির কবরস্থান!

উল্লেখ্য, হিমবাহের দ্রুত গলে যাওয়া (গ্ল্যাসিয়ার মেল্টিং) বিশ্বজুড়ে একটি অতি পরিচিত পরিবেশবিষয়ক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের হিমবাহগুলো প্রায় ৫ শতাংশ গলে গেছে। অর্থাৎ, গত ২৫ বছরে হিমবাহগুলো প্রায় ৫ শতাংশ বরফ হারিয়েছে। সুমেরু অঞ্চলেও হিমবাহের দ্রুত গলে যাওয়া এখন অতি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে।  

রাশিয়ার আর্কটিক অ্যান্ড অ্যান্টার্কটিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এএআরআই)-এর ভূতাত্ত্বিক নিকিতা ডেমিডভ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে, স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে গবেষক দলটি হিমবাহটির বর্তমান ও পূর্বের অবস্থানের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন। এতে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, দ্বীপটির উপরিভাগের আইস ক্যাপটি ২০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, আইস ক্যাপ বা হিমছত্র হচ্ছে একটি বড়, গম্বুজ আকৃতির হিমবাহের বরফপিণ্ড যা নির্দিষ্ট একটি স্থলভাগকে আবৃত করে রাখে।  

আইস ক্যাপ বা হিমছত্রটি দু’ভাগে ভাগ হওয়ার কারণে দ্বীপটির কয়েক বর্গমাইল এলাকা অনাবৃত হয়েছে। আর উন্মোচিত হওয়া এই এলাকাটিতে পাওয়া গেছে প্রচুর সংখ্যক তিমির হাড়গোড় বা কঙ্কাল। ডেমিডভ বলেছেন যে, সমুদ্রতীরের কাছাকাছি থাকা তিমির দেহাবশেষ যেমন হাড়গোড়গুলো দীর্ঘ সময় ধরে গলেছে, ফলে এগুলো ভালোভাবে সংরক্ষিত নেই। তবে হিমবাহের সবচেয়ে কাছাকাছি স্থানে থাকা কঙ্কালগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে।

নিকিতা ডেমিডভ আরও বলেছেন, ‘প্যালিওন্টোলজিক্যাল (জীবাশ্মবিদ্যা সম্পর্কিত) এই আবিস্কার ইউরেশিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে উত্তরের দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের অতি দ্রুত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা গত কয়েক হাজার বছর ধরে ঘটেছে।’ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, এই গবেষণা অভিযানটি পরিচালিত হচ্ছে ‘প্রফেসর মোলচানভ’ নামের বরফ-সহনশীল একটি জাহাজ থেকে এবং অভিযানটি পুরো আগস্ট মাস জুড়ে চলবে।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

আঁখি

×