
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বিজ্ঞানী সমাজে নতুন আলোড়ন তুলেছে। দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করেই পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিতে পরিবর্তন এসেছে। জুলাই মাসে দিনের দৈর্ঘ্য কিছুটা কমে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে পৃথিবী কি তার নিজের ছন্দ বদলে ফেলছে? আর এই পরিবর্তনের প্রভাব কি আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও পড়বে?
গবেষণা বলছে, ১০ জুলাই ছিল ২০২৫ সালের সবচেয়ে ছোট দিন। ওইদিন দিনের দৈর্ঘ্য ছিল সাধারণ সময়ের তুলনায় ১.৩৬ মিলিসেকেন্ড কম। ২২ জুলাই দিনের দৈর্ঘ্য কমে দাঁড়ায় ১.৩৪ মিলিসেকেন্ডে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আগামী ৫ আগস্ট দিনের দৈর্ঘ্য আরও কমে গিয়ে হতে পারে ১.২৫ মিলিসেকেন্ড কম।
প্রাকৃতিক নিয়মে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে এবং নিজ অক্ষে নির্দিষ্ট গতিতে ঘোরে। কিন্তু এবার সেই গতি কিছুটা বেড়ে গেছে। গড় হিসেবে, একদিনের দৈর্ঘ্য হয় ৮৬,৪০০ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন, আবহাওয়া, ভূমিকম্প বা হিমবাহ গলার মতো নানা কারণেই পৃথিবীর এই গতি সামান্য হলেও পরিবর্তিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির পদার্থবিদ জুডা লেভাইন বলেন, “এই সূক্ষ পরিবর্তনের জন্য ১৯৫৫ সাল থেকে আমরা ‘পারমাণবিক ঘড়ি’র সহায়তায় সময়ের হিসাব করি। এর মাধ্যমেই নির্ভুল ‘ইউটিসি’ বা আন্তর্জাতিক সময় গণনা সম্ভব হয়। আধুনিক প্রযুক্তির জগতে মিলিসেকেন্ডের পার্থক্যই বড় ফারাক গড়ে দেয়।”
পৃথিবীর ঘূর্ণনের এই পরিবর্তনের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর ভরের বণ্টনে পরিবর্তন আসে, যা ঘূর্ণনের গতি বাড়াতে পারে। এ ছাড়া এল-নিনো বা লা-নিনার মতো আবহাওয়াজনিত ঘটনাও এই গতি পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। এসব পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে ১৯৭২ সাল থেকে ইউটিসি সময় ব্যবস্থায় যুক্ত করা হচ্ছে ‘লিপ সেকেন্ড’।
যদিও এই সূক্ষ পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো নয়, তবে এর প্রভাব পড়ে স্যাটেলাইট নেভিগেশন, টেলিযোগাযোগ, সুপারকম্পিউটিং এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক লেনদেনের ওপর। অতএব, বিশ্বের বিজ্ঞানীরা এই গতি পরিবর্তনকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন।
পৃথিবীর এমন আচরণ আগামী দিনে আমাদের সময় ব্যবস্থায় নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ঘূর্ণনই যদি আরও দ্রুত হয়, তবে ভবিষ্যতের ‘এক দিন’ হতে পারে আজকের চেয়ে আরও ছোট। তাই সময়ের এই সূক্ষ খেলায় বিজ্ঞানীদের চোখ এখন পৃথিবীর প্রতিটি মুহূর্তে।
দিন ছোট হলেও বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের সময় ব্যবস্থাকে নিখুঁত রাখছে। তবে প্রকৃতির এমন আচরণ ভবিষ্যতের পৃথিবীর দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে যেখানে সময়ের প্রতিটি সেকেন্ডই হয়ে উঠবে আরও গুরুত্বপূর্ণ।
আফরোজা