ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

মূল নায়কদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি 

গুলশানের চাঁদাবাজিতে ক্ষুব্ধ মাহিন ও উমামা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৭ জুলাই ২০২৫

গুলশানের চাঁদাবাজিতে ক্ষুব্ধ মাহিন ও উমামা

গুলশানের চাঁদাবাজিতে ক্ষুব্ধ মাহিন ও উমামা

রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ পাঁচজন। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে সমন্বয়ক বলে পরিচয় দিয়েছেন। এ ঘটনা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুটো পোস্ট দিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও এনসিপি যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার। তারা উভয়েই ঘটনার প্রকৃত হোতাদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন। নিজেদের ফেসবুকে পৃথক পৃথক পোস্টে তারা এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।
রবিবার সকালে বিষয়টি মাহিন সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানান- গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, জ্যেষ্ঠ সংগঠক ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সেলের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, সদস্য মো. সিয়াম ও সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। এ ঘটনায় ইব্রাহিম, সিয়াম ও সাদমানকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এবং আব্দুর রাজ্জাক ও জানে আলম অপুকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মাহিন সরকার লেখেনÑ আব্দুর রাজ্জাক নামের যে ছেলেটা গ্রেপ্তার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার। অর্থাৎ গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের সে লিস্টেড ছাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশে যে কালচার চলে তাতে সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে  কোনোভাবে যুক্ত, এই পরিচয়েই কেউ অর্থ উপার্জন করতে পারে বলে মনে করি। এখানে তার মতো ব্যক্তিকে কীভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করল এটা সামনে আনা প্রয়োজন। এটা খুব করে চাওয়া আমার। জানে আলম অপু নামক ছেলেটা আগে থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক উচ্চবাচ্য করতো, অনেকটা ঔদ্ধত্যের পর্যায়ে। 
তার বিরুদ্ধে নিজ জেলা জয়পুরহাটে অসংখ্য অভিযোগ ইতোপূর্বে কানে এসেছে, যেহেতু রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বে আমি ছিলাম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সে সহ আরও কয়েকজন সেই হত্যাকাণ্ডের কারণ তাদের দাবির সঙ্গে না মেলা সত্ত্বেও তারা আন্দোলন করে এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরে যাতায়াত বৃদ্ধি করে। এখানে জানে আলম অপু শুধু নয়, ওর আশপাশে থাকা আরও দু’-একজনের নামে এমন অভিযোগ আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মাহিন লেখেন, ‘সর্বশেষে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না নামক ছেলেটা এই চাঁদাবাজিতে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

এই নাম আসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারটির যৌক্তিকতা শতভাগ ফুরিয়ে এসেছে। ইতোপূর্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সে ঢাকা মহানগর কমিটি গুছানোতে ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গত কয়েকদিন আগে হওয়া নির্বাচনে সে টপ অর্গানোগ্রামের একটি পদে ইলেকশন করে এবং পরবর্তীতে তার জায়গায় সে না- কি অন্য কাউকে সিলেক্ট করেছে এই অজুহাত দিয়ে সে আর দায়িত্ব নেয়নি। এ রকম অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ইতোপূর্বে জীবনেও প্রত্যক্ষ করিনি আমি।

তিনি আরও লেখেন- ইব্রাহিম হোসেন মুন্নার নামটি একেবারে সেন্ট্রালি কানেক্টেড এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলেম অপুও সেন্ট্রাল নেতা। তাদের সঙ্গে অনেকেরই ভালো খাতির থাকা অস্বাভাবিক নয়। রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত কুশীলবদের বের করে আনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কেননা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার একটি ঐতিহাসিক ব্যানার। আমি ইতোপূর্বেও জানিয়েছি এই ব্যানার আর থাকার প্রয়োজন নেই, যদিও এই ব্যানার প্রতিষ্ঠা করতে আমারও ভূমিকা ছিল।’
মাহিন সরকার তার পোস্টে আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য বলে উল্লেখ করলেও তিনি পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য নন। যদিও গত ২৬ মে আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এদিকে সংগঠনটির সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা জানানÑ এ ঘটনায় অনেকে আশ্চর্য হওয়ার ভান করছেন। কিন্তু তিনিই সবচেয়ে কম আশ্চর্য হয়েছেন।

কারণ, এই আটকদের শিকড় অনেক গভীরে। শনিবার  চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তারদের একটি ছবি পোস্ট করে উমামা ক্যাপশনে লিখেছেন- ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫ জনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এতটাই আশ্চর্যান্বিত হওয়ার অভিনয় করছেন যে, আমার মনে হচ্ছে আমিই সবচেয়ে কম আশ্চর্য হয়েছি। এই ছেলেগুলোরে তো নেতাদের পেছনে প্রোটোকল দিতে দেখা গেছে এতদিন যাবৎ। সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই সমন্বয়কদের ডান হাত, বাম হাত হিসেবে নির্বিঘেœ প্রোটোকল দিয়ে গেছে।

গুলশান-বনানী গ্যাং কালচারের অজস্র অভিযোগ অভ্যন্তরীণভাবে তাদের বিরুদ্ধে ছিল। উমামা লিখেছেনÑ ‘এই ছবির রিয়াদ নামের ছেলেটা গত ডিসেম্বর মাসে রূপায়ণ টাওয়ারে আমার সামনে অত্যন্ত উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা মেয়েরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে, সে আমাদের ওপর পাল্টা চড়াও হয়। ওই ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। আমি জেনে তখন মোটেও অবাক হইনি, কারণ ততদিনে  বৈষম্যবিরোধীতে এই ধরনের মানুষজনের আনাগোনাই সর্বত্র টের পাওয়া যেত। ঠিকই তারা রূপায়ণ টাওয়ারে অবাধে আসা-যাওয়া করত। কারও দুর্নীতি বা অসততার ব্যাপারে অভিযোগ জানালে উত্তরে ‘পিনড্রপ সাইলেন্স’ উপহার পেতে হতো।

আর আমি চোখের সামনে দেখতামÑ এসব লোকজনই কীভাবে দিনশেষে এক্সেস করে নেয়। আজ এত মাস পর এই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে বলার ভাষা পাই না! যে যেভাবে পেরেছে, এই প্ল্যাটফর্মকে নষ্ট করেছে। আজকের এই চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেনÑ বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে। ইশ! মানুষ কত নিষ্পাপ! সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো তারা আবিষ্কার করেছেন! এই ছেলেগুলো আজ কীভাবে চাঁদাবাজি করল! অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধুরা, বলতে হবেÑ এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেল।

ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শিকড় অনেক গভীরে। এর আগে, গত ২৮ জুন ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে নিজের যাত্রা শেষ হওয়ার কথা জানান সংগঠনটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উমামা ফাতেমা। ওই পোস্টে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাউন্সিল ও কার্যক্রম নিয়ে নানা অভিযোগ জানান।

প্যানেল হু

×