
“আংকেল, গেইটটা খুলেন!” - এই আর্তনাদ আজও কুমিল্লার আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয় প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। এক বছর আগে কুমিল্লা মহানগরীর পুলিশ লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে এক তরুণীর এই কণ্ঠস্বর ছিল স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে অসহায়ের আকুতি, ছিল আশ্রয়প্রার্থী সংগ্রামীদের প্রতি তার বুকভরা ভালোবাসা ও সাহসিকতার অশ্রুসিক্ত আবেদন।
গত বছরের সেই ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় এক আবেগঘন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। “ইতিবৃত্ত সংসদ”-এর আয়োজনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান শুধু স্মৃতিচারণ ছিল না, বরং তা ছিল নতুন প্রত্যয়ের এক মঞ্চ।
দ্রোহের গান, প্রতিবাদের নাটক
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল “জুলাইয়ের দ্রোহের গান” এবং নাট্য পরিবেশনা “কথা বলতেই হবে”। গান ও নাটকে জীবন্ত হয়ে ওঠে গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের হৃদয়বিদারক বাস্তবতা—শহীদদের আত্মত্যাগ, আহতদের যন্ত্রণা এবং রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনতার শাণিত প্রতিরোধ। এ যেন ছিল শিল্পের ভাষায় ইতিহাসের পুনর্জন্ম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি কুমিল্লা মডার্ন হসপিটালের এমডি মো. মজিবুর রহমান। অশ্রু ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন-
“আমারই কন্যা পুলিশ লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘আংকেল, গেইটটা খুলেন।’ এই একটি বাক্যে ছিল শত অত্যাচারের বিরুদ্ধে আর্তনাদ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সাহসের উচ্চারণ।
আমি ও আমার পরিবার সে সময় কেবল ধৈর্য ধারণ করেছি। কিছুই করার ছিল না আমাদের মতো অভিভাবকদের। শুধু আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে বলেছি—হে প্রভু, আমাদের সন্তানদের রক্ষা করুন।”
তিনি বলেন, তাঁর কন্যাসহ হাজারও শিক্ষার্থীই এই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। তাদের সাহস, ঐক্য ও দৃঢ়তা থেকেই জন্ম নিয়েছিল প্রতিবাদের সেই ঢেউ, যা আজো থেমে যায়নি।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আরও অনেকে—সংস্কৃতিকর্মী, অভিভাবক, ছাত্রনেতা। তাঁরা বলেন, “জুলাই বিপ্লব” কেবল একটি ঘটনার নাম নয়, এটি একটি আন্দোলনের নাম, একটি চেতনার নাম। এ আন্দোলন আজকের প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেয়—অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হয়, দাঁড়াতে হয়, কথা বলতেই হয়।
“আংকেল, গেইটটা খুলেন”—এই একটি বাক্য আজ পরিণত হয়েছে প্রতীকে। রাষ্ট্রযন্ত্রের মুখোমুখি দাঁড়ানো এক তরুণীর অসহায় আবেদন আজ সাহসিকতার প্রতীক। তা শুধু একটি দিনের আর্তনাদ নয়, বরং একটি সময়ের প্রতিবাদ ও একটি প্রজন্মের দৃপ্ত ঘোষণা—আমরা চুপ থাকব না।
আফরোজা