ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

এক টুকরো পাথর নিলামে বিক্রি হলো ৬৫ কোটি টাকায়, কী আছে এই পাথরে?

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ২৭ জুলাই ২০২৫

এক টুকরো পাথর নিলামে বিক্রি হলো ৬৫ কোটি টাকায়, কী আছে এই পাথরে?

এক টুকরো পাথর নিলামে বিক্রি হলো ৬৫ কোটি টাকায়

একটি পাথর যা এসেছে প্রায় ২৫ কোটির বেশি কিলোমিটার দূরের মঙ্গল গ্রহ থেকে। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত পাওয়া মঙ্গল গ্রহের সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড এটি।

নাম তার ‘এনডব্লিউএ ১৬৭৮৮’। এটি একটি বিরল, মূল্যবান এবং বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাজাগতিক বস্তু। এর ওজন ২৪ দশমিক ৫ কেজি বা প্রায় ৫৪ পাউন্ড। তুলনার জন্য বলা যায়, সাধারণত মঙ্গল থেকে আসা উল্কাপিণ্ডগুলো হয় খুব ছোট—এক বা দুই কেজি বা তারও কম ওজনের।

২০২৩ সালের নভেম্বরে আফ্রিকার নিগার দেশের দূরবর্তী আগাদেজ অঞ্চলে এটি আবিষ্কৃত হয়। এরপর এটি নিউইয়র্কের বিখ্যাত নিলামঘর সোথেবি’স-এ তোলা হয়। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এক গোপন পরিচয়ের সংগ্রাহক এটি কিনে নেন ৫.৩ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬৫ কোটি টাকায়। এর ফলে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি মঙ্গলজাত উল্কাপিণ্ড হিসেবে পরিচিতি পায়।

সোথেবি’স-এর বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান ক্যাসান্দ্রা হ্যাটন এক বিবৃতিতে বলেন, এমন উল্কাপিণ্ড পাওয়ার ঘটনা এক প্রজন্মে একবারই ঘটে। এই আবিষ্কার আমাদের মঙ্গলগ্রহের সরাসরি গঠন, রং ও বিশালতা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে। এটি না পেলে হয়তো এই তথ্য পেতে আমাদের আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হতো।

এই পাথর যেভাবে পৃথিবীতে এলো

বিজ্ঞানীদের ধারণা, লাখ লাখ বছর আগে মঙ্গলগ্রহে একটি বিশাল গ্রহাণুর আঘাতে এই পাথরটি মহাকাশে ছিটকে পড়ে। সংঘর্ষ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এর কিছু অংশ গলে গিয়ে কাচে পরিণত হয়। পরে সেটি পৃথিবীর দিকে ভেসে আসে এবং বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে মাটিতে আছড়ে পড়ে। প্রবেশের সময় উচ্চ তাপে এর উপরিভাগে গলিত কাচের মতো একটি চকচকে আবরণ তৈরি হয়, যা আজও দৃশ্যমান।

বিজ্ঞানের জন্য আশীর্বাদ

এই ধরনের উল্কাপিণ্ড বিজ্ঞানীদের জন্য অমূল্য সম্পদ। এর উপাদান বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় মঙ্গলগ্রহের ভূগঠন, আবহাওয়া এবং অতীত ইতিহাস সম্পর্কে নানা তথ্য। তবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন ব্যক্তিগত সংগ্রহে চলে যাওয়া অনেক বিজ্ঞানীর জন্য উদ্বেগের বিষয়।

স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসাট বলেন, ‘এটি যদি কোনো ধনকুবেরের ব্যক্তিগত সংগ্রহে চলে যায়, তাহলে বিজ্ঞান ও সাধারণ মানুষের জন্য তা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের বস্তু জাদুঘরে থাকা উচিত, যাতে সবাই তা দেখতে পারে এবং গবেষকেরা সেটি নিয়ে কাজ করতে পারেন।’

অবশ্য একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও মত রয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লেইসেস্টারের গ্রহবিজ্ঞানী জুলিয়া কার্টরাইট মনে করেন, ‘উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ, বিক্রি ও নিলামের বাজার না থাকলে আমরা এত নমুনা পেতাম না। গবেষক ও সংগ্রহশীলদের মধ্যে একটি সহাবস্থানের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’

আশার কথা হলো, এই উল্কাপিণ্ডের একটি অংশ, যাকে ‘রেফারেন্স স্যাম্পল’ বলা হয়, সেটি চীনের পার্পল মাউন্টেন অবজারভেটরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। ভবিষ্যতে সেটি গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যাবে।

সূত্র: সিএনএন ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
 

তাসমিম

×