
যেভাবে তরুণদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়বে
ভুল অর্থ ব্যবস্থাপনার কারণে ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই জীবনের শুরু থেকেই সুশৃঙ্খল অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থ ব্যবস্থাপনা শুরু করার সহজ পদক্ষেপ
প্রথমেই নিজের আয়ের পরিষ্কার হিসাব রাখা জরুরি। মাসে মোট কত টাকা আয় হয় এবং কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে, তা বিস্তারিতভাবে লিখে রাখা প্রয়োজন। বাসা ভাড়া, খাবার, মোবাইল বিল, যাতায়াত, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ ফি ইত্যাদি খরচের তালিকা তৈরি করুন। এর মাধ্যমে বুঝতে পারবেন কোন খাতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে এবং কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বাজেট তৈরির সময় অবশ্যই সঞ্চয়ের জন্য একটি অংশ আলাদা রাখুন। জরুরি সময়ের জন্য, যেমন অর্থনৈতিক মন্দা, চিকিৎসা ব্যয় বা চাকরি হারানোর পরিস্থিতিতে, এই সঞ্চয় বড় সাহায্য করে। বাকি টাকা ব্যক্তিগত প্রয়োজন, বিনোদন বা সাময়িক আনন্দে ব্যবহার করতে পারেন, তবে সব সময় বাজেটের মধ্যে থাকতে হবে।
প্রযুক্তির সুবিধা ও সতর্কতা
বর্তমানে অনেক ব্যাংকিং ও ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাপ আছে যা খরচ নজরদারিতে সাহায্য করে। তরুণদের এসব ব্যবহার শেখা জরুরি। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। বিল সময়মতো না পরিশোধ করলে সুদের বোঝা বেড়ে যায়, যা ঋণের ফাঁদ তৈরি করতে পারে।
প্রয়োজন ও বিলাসিতার মাঝে পার্থক্য
প্রতিদিনের কেনাকাটায় প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস আলাদা করতে হবে। যেসব জিনিস দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহৃত হবে বা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন, সেগুলো ‘প্রয়োজন’ হিসেবে গণ্য করুন। আর বিনোদনের জন্য করা খরচ বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
হঠাৎ কেনাকাটা রোধের কৌশল
অনেকে আবেগে হঠাৎ খরচ করে বসেন, যা মাস শেষে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। এ জন্য কিছু মনস্তাত্ত্বিক কৌশল অনুসরণ করতে পারেন, যেমন নতুন কিছু কিনতে চাইলেই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করা, প্রতিদিন খরচের হিসাব রাখা অথবা কারও কাছে নিজের খরচের জবাবদিহি করা।
প্রতারণা ও ঋণের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকুন
বর্তমানে প্রতারণার ঘটনা বেড়েছে। ফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে ব্যাংক বা কার্ডের তথ্য চাইলে সতর্ক হন। অপরিচিত লোন প্রতিষ্ঠানের প্রলোভনে পড়বেন না। প্রয়োজনে শুধু বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিন এবং প্রয়োজন ছাড়া ঋণ গ্রহণ এড়িয়ে চলুন।
আয়ের একাধিক উৎস তৈরি করুন
আজকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে একমাত্র আয় উৎসের ওপর নির্ভর থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন ব্যবসা, টিউশন, ব্লগিং বা ইউটিউবের মাধ্যমে আয় বাড়াতে পারেন। শেয়ারবাজার, মিউচুয়াল ফান্ড, সঞ্চয়পত্র বা ডিজিটাল ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে ধারণা নিন, তবে আগে বাজার বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জ্ঞান অর্জন করুন। একাধিক আয় উৎস থাকলে সঞ্চয় ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বিমা করুন
তরুণ বয়সে অনেকেই বিমাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, কিন্তু দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা হঠাৎ জীবনের গতিপথ থামিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিমা অনেক বড় সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এখন কম খরচে স্বাস্থ্য ও জীবন বিমা করানো সম্ভব, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি।
অর্থ উপার্জন গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করলে জীবন অস্থির হয়। তরুণ বয়সেই অর্থ সচেতনতা, বাজেটিং, সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল আয়ত্ত করলে ভবিষ্যত হবে অনেক বেশি নিরাপদ ও স্থিতিশীল।
সূত্র: মাইলস্টোন
তাসমিম