ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

যে মন্দিরকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:২১, ২৭ জুলাই ২০২৫

যে মন্দিরকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার দ্বন্দ্ব

ছবি: সংগৃহীত

একটি পাথরের মন্দির—নীরব, স্থির। কিন্তু তার চারপাশে যেন জ্বলছে বজ্রনীনাথ। শতবর্ষ পেরিয়ে এসেও থামেনি এই লড়াই। কারণ, ইংল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার অতীত এবং বর্তমানের এই দ্বন্দ্বে মন্দিরটি আর কেবল একটি স্থাপনা নয়—এটা এখন সম্মানের প্রতীক, ইতিহাসের ছায়া এবং ভূখণ্ডের দাবি।

দুই দেশের সীমান্তে ঘন জঙ্গল আর উঁচু পাহাড়ের ভেতর এক জায়গা, যার নাম এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গেল। এখানেই এসে মিলেছে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওস—এই তিন দেশের সীমানা। এই এলাকায় রয়েছে বহু প্রাচীন মন্দির। তার মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর হলো ১১০০ শতকে তৈরি প্রেয়াহ বিহার মন্দির।


কম্বোডিয়া একসময় ছিল ফরাসি উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত। ১৯০৭ সালে সেই উপনিবেশিক শাসকরাই তৈরি করে একটি মানচিত্র, যেখানে স্পষ্টভাবে প্রেয়াহ বিহারকে দেখানো হয় কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীতে থাইল্যান্ড তা মানতে চায়নি। তারা দাবি তোলে, মন্দিরটি তাদের সীমানার ভেতরেই অবস্থিত।

এই বিরোধ গড়ায় আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত। ১৯৬২ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (ICJ) রায় দেয় কম্বোডিয়ার পক্ষে। কিন্তু থাইল্যান্ড তখনও দাবি করে, শুধু মন্দির নয়, তার আশেপাশের ভূমিও তাদের। এই দ্বিধা থেকেই সীমান্তে বাড়তে থাকে উত্তেজনা।

২০০৮ সালে ফের উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে, যখন ইউনেস্কো প্রেয়াহ বিহারকে কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। তখনই দুই দেশের সেনারা সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ২০১১ সালে রীতিমতো গোলাগুলিও হয়, ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে আদালত আবার রায় দেয় কম্বোডিয়ার পক্ষেই।

তবে এই রায়ও থামাতে পারেনি সীমান্তে থাকা অস্পষ্টতা ও পারস্পরিক সন্দেহ। এর আগেও ২০০০ সালে সমাধানের খোঁজে দুই দেশ মিলে তৈরি করেছিল যৌথ সীমান্ত কমিশন (JBC)। সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা চললেও শান্তি আসেনি।

২০২৫ সালের ১৪ জুন নমপেনে আবারও বৈঠক হয় JBC-র উদ্যোগে। তবে এখনো আসেনি কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। আলোচনার টেবিলেই পড়ে আছে শান্তির আশা।

শেখ ফরিদ 

×