
পটুয়াখালী–কুয়াকাটা ৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক এখন খানাখন্দে ভরা। গত দেড় মাস ধরে টানা বর্ষণে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যান চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। এই মহাসড়কটি দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১০ লাখ মানুষের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ২০০০ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কটি নির্মাণ করে। নির্মাণকালেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৮ সালে সওজ সড়কের কিছু স্থানে দায়সারা সংস্কার করে। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৯১২টি বৈধ যানবাহন চলাচল করে—যার মধ্যে রয়েছে পরিবহন বাস, লোকাল বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার। এছাড়া অন্তত এক হাজার অবৈধ মাহিন্দ্রা, ট্রলি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও চলাচল করে, এমন তথ্য জানিয়েছেন পটুয়াখালী সেতুর টোল ইনচার্জ।
চালকদের অভিযোগ, ভারী বর্ষণে সড়কের পিচ নরম হয়ে গেছে। যানবাহনের চাপে ওই পিচ উঠে গিয়ে সড়কে গর্ত তৈরি হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে এবং চালকদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সমস্যা হচ্ছে। আগে যেখানে পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগত প্রায় দুই ঘণ্টা, এখন লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এতে যাত্রীদের সময় ও ভোগান্তি—দুটোই বেড়েছে।
রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের প্রায় প্রতিটি অংশেই ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। অনেক জায়গায় প্রতি ৫০ গজ পরপর গর্ত দেখা গেছে। আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, মহিষকাটা, চুনাখালী, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর সড়ক জুড়ে এসব খানাখন্দ ছড়িয়ে আছে।
যাত্রী মো. জিয়াউদ্দিন জুয়েল মৃধা, এনামুল হক ও রিপা বলেন, “সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে দুই ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। ঝুঁকি তো থাকছেই। দ্রুত সংস্কার দরকার।”
শ্যামলী এনআর পরিবহনের চালক কেরামত আলী বলেন, “স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রাস্তায় এত গর্ত যে গাড়ি চালানো দায়।”
তুহিন পরিবহনের চালক কাওসার হাওলাদার বলেন, “বৃষ্টিতে পিচ উঠে যাচ্ছে। এতে গর্ত হচ্ছে, আর সেটা সামলাতে গিয়েই গাড়ি নষ্ট হচ্ছে।”
আমতলী বাস মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক অহিদুজ্জামান স্বজল মৃধা বলেন, “রাস্তায় গর্তের কারণে যাত্রীরা বিরক্ত হচ্ছেন। অনেকে বিকল্প পথে যাচ্ছেন। এতে যাত্রীসংখ্যা কমে যাচ্ছে। দ্রুত সংস্কার দরকার।”
পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ইমাম হোসেন নাশির বলেন, “এই সড়কের কারণে কুয়াকাটার পর্যটন খাতও হুমকির মুখে পড়েছে। ১০ লাখের বেশি মানুষের জন্য এটি দুর্ভোগের রাস্তায় পরিণত হয়েছে।”
এ বিষয়ে বরগুনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কমারেশ বিশ্বাস বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তার পিচ নরম হয়ে গেছে। গাড়ির চাপে পিচ উঠে গিয়ে গর্ত হয়েছে। মোবাইল টিম দিয়ে তাৎক্ষণিক মেরামত চলছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ পেলে পুরো সড়ক সংস্কার করা হবে।”
সানজানা