
পৃথিবীকে পরিবেশবান্ধব এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তাই বলে সব রকম গাছই যে মানুষের জন্য উপকারী কিংবা পরিবেশবান্ধব হবে—তা কিন্তু নয়, বরং হতে পারে এর উল্টোটা।
সারা বিশ্বে প্রায় ৭০০ প্রজাতির ইউক্যালিপটাস গাছ রয়েছে। ইউক্যালিপটাস গাছগুলো দ্রুত বড় হওয়ার কারণে চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় ইউক্যালিপটাসের বনায়ন চলছে অবাধে। অথচ এ গাছের বিরূপ প্রভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল ও প্রাণী।
বৈজ্ঞানিক ভাষায় ইউক্যালিপটাসকে বলা হয় বোলিকোয়া। এই গাছের বনায়নের ফলে চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। জমির পাশের সড়ক, মানুষের বসতভিটা কিংবা খেতের ধারে ইউক্যালিপটাস গাছের ছায়ায় হাজার হাজার একর জমির ধানের ফলন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য গাছও বড় হতে পারছে না।
এই গাছের পাতা জমির পানিতে পড়ে তা বিষাক্ত করে তুলছে, ফলে অনেক প্রাণী মারা যাচ্ছে। ইউক্যালিপটাস এমন একটি গাছ যা মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটায়।
মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন বলেন, “ইউক্যালিপটাস গাছ তার আশপাশের প্রায় ১০ ফুট এলাকাজুড়ে এবং ভূগর্ভের প্রায় ৫০ ফুট গভীর থেকে পানি শোষণ করে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতাসে ছেড়ে দেয়। এই প্রক্রিয়াটি ২৪ ঘণ্টাই চলে। ফলে দ্রুত মাটিতে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং আশপাশে অন্য কোনো গাছ জন্মাতে পারে না। এতে মাটির উর্বরতা কমে যায়। ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে ফেললেও মাটির উর্বরতা ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে।”
তিনি আরও বলেন, “এই গাছের ফুল ও ফল ঝরে পড়লে পরিবেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এর পাপড়ি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি ও হৃদরোগ সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের জলবায়ুর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক গাছ হলো ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি।”
চন্দনাইশের কৃষকদের অভিযোগ, এই গাছের কারণে আশপাশের জমিতে ধানের ফলন কমে যাচ্ছে। গাছের পাতা জমিতে পড়ে পানিকে বিষাক্ত করে তুলছে, এতে প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। ইউক্যালিপটাসের শেকড় ছড়িয়ে পড়ায় জমিতে ঠিকমতো হাল দেওয়া যাচ্ছে না।
দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ইমরুল কায়েস জানান, “সরকারিভাবে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই গাছ রিজার্ভ বনে আর রোপণ করা হয় না। তবে কিছু উপকূলীয় বা খরা–প্রবণ এলাকায় অন্য গাছ না জন্মায় বলে সেখানে সীমিত পরিসরে ইউক্যালিপটাস রোপণ করা হয় কাঠ ও লাকড়ির প্রয়োজন মেটাতে। তবে চন্দনাইশে এ গাছ রোপণের কোনো সুযোগ নেই।”
সানজানা