
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে রঞ্জন রায় (২১) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। রঞ্জন ওই গ্রামের শ্রী সুজন চন্দ্র রায়ের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রঞ্জন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে মহানবী (সা.) সম্পর্কে একাধিকবার কটূক্তিমূলক ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের কিছুক্ষণ পর, সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা রঞ্জনের কাকার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তা ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার জটলা আরও বাড়তে থাকে।
রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হ্যান্ড মাইকে আহ্বান জানান। এক ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল দল এলাকায় অবস্থান নেয়।
পরদিন (রবিবার, ২৭ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে শতাধিক লোক লাঠি-সোটা নিয়ে পুনরায় এলাকায় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী সিঙ্গেরগাড়ি ও মাগুরা উপজেলার বাসিন্দা।
ভয়ে আলদাদপুরসহ আশপাশের হিন্দু পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এক অসহায় বাসিন্দার কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ— “আমরা তো কিছু করিনি ভাই, তাও আমাদের ঘর ভেঙে দিল কেন? এখন যাব কোথায়?”
রংপুরের গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। রঞ্জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রিয় নবীর অপমানে আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া চলবে না।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, “অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ডিসি স্যার বিষয়টি সরাসরি তদারকি করছেন। ভাঙচুর কোন সমাধান নয়— শান্ত থাকুন, আইনানুগভাবে অপরাধীর বিচার হবে।”
নুসরাত