ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, একমত সব দল

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৭ জুলাই ২০২৫

এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, একমত সব দল

ড. আলী রীয়াজ

প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ১০ বছর করার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একই সঙ্গে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। 
তবে সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে চতুর্থ দিনেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। মূলতঃ বাহাত্তরের সংবিধান থাকা না থাকা নিয়ে তাদের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে মৃদু উত্তেজনাও দেখা দেয়। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
তবে বিদ্যমান সংবিধানের মূলনীতিতে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলোকে যুক্ত করার বিষয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত। আর বাহাত্তরের সংবিধান থাকবে কী থাকবে না, সেটি নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেনি ঐকমত্য কমিশন। সেটি পরবর্তী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানেই আপত্তি বাম দলগুলোর। তারা এটি এখনই সুরাহা করতে চায়।
রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম দীর্ঘ বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।  
বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘কমিশন ইতোমধ্যে জুলাই সনদের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে এবং বিবেচনার জন্য আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে একটি করে খসড়া প্রেরণ করা হবে। সেটি নিয়ে আপনারা নিজেদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে আমাদের মতামত জানালে সেগুলো এতে সন্নিবেশিত করা হবে।’
এ সময় তিনি জানান যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো মৌলিক আপত্তির বিষয় উত্থাপিত না হলে সেটি নিয়ে বৈঠকে আর আলোচনা করা হবে না।
ড. আলী রীয়াজ জানান, সবার মতামত পাওয়ার পর সেগুলোকে সন্নিবেশিত করে চূড়ান্ত জুলাই সনদের পটভূমি, প্রাথমিক বক্তব্য সমূহ, অঙ্গীকার এবং প্রক্রিয়ার বিষয় বস্তুগুলো অন্তর্ভুক্ত করে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তুলে ধরা হবে।
সময়ের স্বল্পতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আমাদের আলোচনা যে কোনোভাবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আলোচনা শেষ করার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শেষ করার পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে চাই। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি, ১০টি বিষয়ে আমরা একধরনের ঐকমত্যে পৌঁছেছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোট অফ ডিসেন্ট আছে এবং সাতটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু তা অসমাপ্ত রয়েছে। তিনটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন আলোচনা হয়নি।
রবিবার আলোচ্য সূচিতে পূর্বের আলোচিত দুটি অসমাপ্ত বিষয় ও পাশাপাশি একটি নতুন বিষয়কে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করতে চাই, যেন প্রক্রিয়াটাকে নিয়ে সমাপ্তির দিকে অগ্রসর হতে পারি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রবিবারের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
এ আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই সনদ দ্রুত প্রণয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত সকল বিষয়ে ঐকমত্য গড়তে আগামী কিছুদিন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলমান থাকবে। 
এক ব্যক্তি জীবনে প্রধানমন্ত্রীর পদে ১০ বছরের বেশি নয় ॥ প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ১০ বছর করার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একই সঙ্গে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, কিন্তু সেটা বলা হয়নি। সেটা হল- একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদকালের জন্য দায়িত্বপালন করবেন। সনদে প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির মেয়াদকাল ১০ বছর উল্লেখ করব। এ বিষয়ে আমরা কি একমত হয়েছি? এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ সাহেব একটি শর্ত দিয়েছিলেন, সেটা কি এখনো আছে?’
তার পরে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা একবার বলেছি তো বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন না। আমি বলেছিলাম সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কমিটি থাকলে বিষয়টি মানব না। আমরা এ হাউজের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান সংবিধানে যুক্ত করব। এর বাইরের বিষয়ে আলোচনা হলে আমাদের শর্ত বহাল থাকবে। আশা করি, সেটা বিবেচনা করবেন। এখন ১০ বছরের বিষয়ে আপনারা ঘোষণা দিতে পারেন। বরং এটা আমাদের প্রস্তাব।’
বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্বে পক্ষে বিএনপি। এতে ফ্যাসিবাদি ও স্বৈরাচারী প্রথা কমতে পারে। তাছাড়াও নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেরও এই নিয়ম চালু থাকা উচিত।
এর আগে আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে দলগুলো আলোচনা করে স্বাধীন কমিশন গঠনের বিষয়ে একমত হয়। তবে এর আইনি কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত। গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনায় একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়েছে। যা পুলিশের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে, জনবান্ধবতা নিশ্চিত করবে।’
পুলিশ কমিশন বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, পুলিশ বাহিনী যেন একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী হিসেবে আইনসম্মত ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করা হবে কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক উভয় পক্ষের অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বও এই কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন (যা ‘কমিশন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) গঠিত হবে একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে, যার বয়স হতে হবে ৭২ বছরের নিচে। কমিশনের সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজিপি) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, যার বয়স ৬২ বছরের নিচে হবে। এ ছাড়া কমিশনে সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এদের মধ্যে থাকবেন সংসদে সরকার দলের নেতা (লিডার অব দ্য হাউস), বিরোধী দল নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের (যিনি বিরোধী দল থেকে হবেন) একজন করে প্রতিনিধি।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী, যিনি হাইকোর্ট বিভাগে অন্তর্ভুক্ত এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন; একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি কমপক্ষে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশনের অন্তত দুইজন সদস্য নারী হতে হবে। কিছু নির্ধারিত সদস্য বাছাইয়ের জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যার সদস্য থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক। কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন, বাকি সাতজন সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বৈঠকে উপস্থিতি ও অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ও অন্যান্য সদস্যদের দায়িত্ব, ক্ষমতা, জবাবদিহিতা, পদত্যাগ এবং অপসারণের পদ্ধতি একটি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কমিশনের নীতিগত ও নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তা অনুমোদিত হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছবে সেগুলো নিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বা ‘জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের জন্য সংলাপে একটি দিন বরাদ্দ করা হবে বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।
রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নিয়ে মতভেদ ॥ সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে চতুর্থ দিনেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। মূলত বাহাত্তরের সংবিধান থাকা না থাকা নিয়ে তাদের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে মৃদু উত্তেজনাও দেখা দেয়। তবে বিদ্যমান সংবিধানের মূলনীতিতে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলোকে যুক্ত করার বিষয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত।
আর বাহাত্তরের সংবিধান থাকবে কী থাকবে না, সেটি নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেনি কমিশন। সেটি পরবর্তী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানেই আপত্তি বাম দলগুলোর। তারা এটি এখনই সুরাহা করতে চায়।
এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো পঞ্চম সংশোধনীর ধারাগুলো রাখার পক্ষে। আর বাম দলগুলোর মন্তব্য নতুন ধারাগুলো নিয়ে তাদের আপত্তি না থাকলেও বাহাত্তরের মূলনীতিতে হাত দেওয়া চলবে না। তাদের অভিযোগ শব্দের মারপ্যাঁচে কমিশন বাহাত্তরের সংবিধানকে অপাঙ্ক্তেয় করার চেষ্টা করছে।
বৈঠক শেষে সালাউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত। তবে পঞ্চম সংশোধনীতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা রাখার পক্ষে বিএনপি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত ‘আল্লাহ’র প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ সংবিধানে পুনঃস্থাপন করতে হবে। বিষয়টি আমরা কমিশনকে স্পষ্ট করে বলেছি। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে ৩০০ আসনের নির্বাচনের ভোটের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে নারীদের ১০০ আসনের নির্বাচনের পক্ষে জামায়াতে ইসলামী।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান একাত্তরকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই সে সংবিধানের মূলনীতিগুলো বাদ দিতে হবে। বিদ্যমান সংবিধান বহাল রেখে গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সব দল একমত। আমরা বলেছি পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ পুলিশকে পুলিশ লীগে পরিণত করেছিল।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট বা খোলাসা করা যাবে না। এর আগে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড। বাহাত্তরের মূলনীতিগুলো বাদ দিতে হবে। কোনো এক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যাবে না। এ নিয়ে সবার মতামত নিতে হবে।’
আলোচনার বিরতীতে ব্রিফিংকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি সমুন্নত রেখে আমরা নতুন প্রস্তাব যুক্ত করার পক্ষে। কারণ চার মূলনীতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। তাই কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সেখানে হাত দেওয়া আমরা মেনে নেব না। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বেশির দল বাহাত্তরের সংবিধান বাদ দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা পঞ্চম সংবিধানের পক্ষে। যেখানে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবদের কথা উল্লেখ ছিল। তিনি এ নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে একমত পোষণ করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই চার মূলনীতি। সেগুলো সমুন্নত রেখেই নতুন ধারা সংযুক্ত করতে হবে। এটি সংশোধনে জাতীয় সংসদের কাছে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানেই সমাধান করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, ৭২ সংবিধান ছিল এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তিনি বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দেওয়া ও কমিশন প্রস্তাবিত মূলনীতি প্রতিস্থাপনের পক্ষে মত দেন।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আদর্শগত বিষয়ে চাপাচাপির সুযোগ নেই। বিদ্যমান চার মূলনীতি রেখে ঠিক রেখে সব কিছু করতে হবে। তিনি বিভক্তি তৈরি না করার আহ্বান জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, মূলনীতি চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। কিন্তু সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দেওয়ার দাবি জানান।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, চার মূলনীতিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবকে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধ শুধু আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করলে অবশ্যই বিদ্যমান চার মূলনীতি ঠিক রাখতে হবে।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এর মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, মূলনীতি নিয়ে কয়েকটি দল অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি একটি দর্শন। রাষ্ট্রের মূল আদর্শে নোট অব ডিসেন্ট করলে হবে না। এটি চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। মৌলিক বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল বলেন, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না। জাতীয়তাবাদী কারণে অনেক জাতিগোষ্ঠীকে অবমূল্যায়ন করা হয়।

প্যানেল হু

×