ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

হার্টের ক্ষতি করছেন অজান্তেই? এই ৪ খাবার আপনার জন্য বিপদজনক!

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৮ জুলাই ২০২৫

হার্টের ক্ষতি করছেন অজান্তেই? এই ৪ খাবার আপনার জন্য বিপদজনক!

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের হৃদপিণ্ড শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি, যা নিরন্তর রক্ত ​​সঞ্চালনের মাধ্যমে জীবন ধারণ নিশ্চিত করে। অথচ আমাদের দৈনন্দিন কিছু খাদ্যাভ্যাস অজান্তেই হৃদপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। অনেক সময় এই ক্ষতি এতটাই নীরব থাকে যে, বিপদ যখন গুরুতর হয়, তখনই তা ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা এই খাবারগুলোকে 'হার্টের নীরব শত্রু' বলে অভিহিত করছেন।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবার সম্পর্কে, যা নিয়মিত খেলে আপনার হৃদপিণ্ড মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে:

১. উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার:

কেন ক্ষতিকর: এই ফ্যাটগুলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চ LDL হৃদপিণ্ডের ধমনীগুলোতে চর্বি জমতে সাহায্য করে, যা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া) সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ট্রান্স ফ্যাট তো আরও বেশি বিপজ্জনক, কারণ এটি LDL বাড়ায় এবং HDL কমায় উভয়ই।

যেসব খাবারে বেশি থাকে:
গভীর তেলে ভাজা খাবার: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ভাজাপোড়া স্ন্যাকস, প্রক্রিয়াজাত নাগেট।
ফাস্ট ফুড: বার্গার, পিৎজা, চিকেন ফ্রাই।
প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটজাত খাবার: কুকিজ, ক্র্যাকার্স, কিছু প্যাকেটজাত কেক ও পেস্ট্রি।
লাল মাংস: অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বিযুক্ত গরুর মাংস, খাসির মাংস, শূকরের মাংস।
কিছু দুগ্ধজাত পণ্য: ফুল ফ্যাট দুধ, পনির, মাখন।

২. অতিরিক্ত চিনি এবং চিনিযুক্ত পানীয়:

কেন ক্ষতিকর: অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ শুধু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই বাড়ায় না, এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। চিনিযুক্ত পানীয়তে কোনো পুষ্টিগুণ থাকে না, শুধু অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে, যা ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

যেসব খাবারে বেশি থাকে:
সফট ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিঙ্কস, প্যাকেটজাত ফলের রস।
ক্যান্ডি, চকোলেট, মিষ্টি বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি।
আর্টিফিশিয়াল সুইটেনারযুক্ত 'ডায়েট' পানীয়ও দীর্ঘমেয়াদে হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার:

কেন ক্ষতিকর: অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং সময়ের সাথে সাথে হৃদপিণ্ডের পেশী দুর্বল করে দেয়।

যেসব খাবারে বেশি থাকে:
চিপস, ক্র্যাকার্স, প্রক্রিয়াজাত চিপস ও স্ন্যাকস।
প্রক্রিয়াজাত মাংস: সসেজ, বেকন, সালামি।
টিনজাত স্যুপ, প্রক্রিয়াজাত সস, আচার।
রেডি-টু-ইট ফোজেন খাবার।

ফাস্ট ফুড এবং রেস্টুরেন্টের খাবারেও প্রচুর পরিমাণে লুকানো সোডিয়াম থাকে।

৪. অতিরিক্ত অ্যালকোহল:

কেন ক্ষতিকর: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন সরাসরি হৃদপিণ্ডের পেশীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে (অ্যালকোহলিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি)। এটি রক্তচাপ বাড়ায়, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যারিথমিয়া) সৃষ্টি করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, অ্যালকোহল অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

যেসব পানীয়তে বেশি থাকে: সব ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়।

হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে কী করবেন?
এই 'নীরব শত্রু' খাবারগুলো এড়িয়ে চলা হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখার প্রথম ধাপ। এর পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে:

সুষম খাদ্য: প্রচুর তাজা ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য (যেমন ওটস, বাদামী চাল), এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন অ্যাভোকাডো, বাদাম, জলপাই তেল) গ্রহণ করুন।
পর্যাপ্ত পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
চর্বিহীন প্রোটিন: লাল মাংসের পরিবর্তে মুরগির মাংস (চামড়াবিহীন), মাছ এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন (যেমন ডাল, বিনস, মটরশুঁটি) বেছে নিন।
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: সুস্থ ওজন বজায় রাখা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত জরুরি।
ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান হৃদপিণ্ডের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং চেকআপ করান।
আপনার খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট পরিবর্তন আনলে তা দীর্ঘমেয়াদে আপনার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আজই এই নীরব শত্রুদের আপনার জীবন থেকে বাদ দিন এবং একটি সুস্থ হৃদপিণ্ড নিয়ে দীর্ঘ, সুস্থ জীবন উপভোগ করুন।

ফারুক

×