
ছবি: প্রতীকী
রাতে হঠাৎ এসিডিটির সমস্যা দেখা দিলে তা খুবই অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর হতে পারে। অনেক সময় ঘুমের মাঝখানে বুকজ্বালা, ঢেকুরের সঙ্গে টক স্বাদ, পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই উপশম পাওয়া সম্ভব।
প্রথমেই যা করতে হবে, তা হলো উঠে বসে পড়া। শোয়া অবস্থায় এসিড আরও ওপরের দিকে উঠে আসে, ফলে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই মাথা ও বুক উঁচু করে বসা কিংবা বিছানায় আধশোয়া হয়ে থাকাটাই উপযুক্ত। চাইলে মাথার নিচে এক বা দুটি বালিশ বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে পাকস্থলীর এসিড খাদ্যনালীর ওপরের অংশে উঠতে পারে না, ফলে বুকজ্বালা কমে আসবে।
এরপর গরম পানি খানিকটা ধীরে ধীরে খাওয়া ভালো। হালকা গরম পানি পাকস্থলীতে এসিডের প্রভাব কিছুটা হ্রাস করে এবং হজমে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে খুব গরম বা খুব ঠান্ডা পানি নয়, কুসুম গরম পানি বেছে নেওয়া উচিত।
অনেকে রাতের বেলায় এসিডিটি অনুভব করলেই অ্যান্টাসিড খেয়ে থাকেন। যদি ডাক্তারের পরামর্শে আগে থেকে অ্যান্টাসিড ব্যবহার করার অনুমতি থাকে, তাহলে অল্প পরিমাণে সেফ অ্যান্টাসিড খাওয়া যেতে পারে। এটি এসিডের মাত্রা দ্রুত কমিয়ে দেয় এবং অস্বস্তি প্রশমিত করে। তবে বারবার অ্যান্টাসিড খাওয়া কোনও স্থায়ী সমাধান নয়।
ঘরে থাকলে সহজলভ্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদানও কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন এক চামচ গরম জলে গুলে একটু মধু খাওয়া। মধু পাকস্থলীর শ্লেষ্মা আবরণে সুরক্ষা দেয় এবং এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। কেউ কেউ এক চিমটি জিরা গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। জিরা হজমে সহায়তা করে এবং পাকস্থলীর গ্যাস ও অম্লতা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তেমনই খালি দুধ না খেয়ে, এক কাপ ঠান্ডা (তবে বরফ দেয়া নয়) দুধও খানিকটা উপকারে আসতে পারে—দুধের ক্যালসিয়াম এসিড নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে।
খেয়াল রাখতে হবে, এই সময়ে একেবারেই শোয়া যাবে না। অন্তত আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সোজা হয়ে বসে থাকতে হবে। চাইলে হালকা হাঁটাহাঁটিও করা যেতে পারে। এতে হজমে সহায়তা হয় এবং পাকস্থলীর চাপ কমে আসে।
রাতে এসিডিটি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ভারী রাতের খাবার খাওয়া, দেরিতে খাওয়া বা চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ। অনেকেই রাত ১০টা বা তার পরে খাওয়ার অভ্যাস রাখেন, তারপর শুয়ে পড়েন। এতে খাদ্য পুরোপুরি হজম না হয়ে পাকস্থলীতে থেকে যায় এবং এসিড তৈরি হয় বেশি পরিমাণে। তাই ভবিষ্যতের জন্য এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে রাতের খাবার শোয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। খাবার হওয়া উচিত হালকা ও সহজপাচ্য। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত বা টকজাতীয় খাবার যেমন টমেটো, লেবু, আচার ইত্যাদি রাতের বেলায় এড়িয়ে চলা ভালো।
রাতে এসিডিটি হলে অনেক সময় মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাবও দেখা দেয়। এমন হলে মাথা ঠান্ডা রাখাই সবচেয়ে জরুরি। পিপারমিন্ট চা বা তুলসিপাতা দিয়ে তৈরি ভেষজ চা হালকা করে খাওয়া যেতে পারে, তবে দুধ চা না খাওয়াই ভালো। দুধ চা হজমে সমস্যা বাড়াতে পারে এবং এসিড বৃদ্ধি করতে পারে।
ঘন ঘন এমন সমস্যা হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ বারবার রাতের বেলায় এসিডিটি দেখা দেওয়া গ্যাস্ট্রিক আলসার, গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বা হেলিকোব্যাকটার সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন নিয়মিত চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন।
সুতরাং, রাতে এসিডিটি হলে প্রথম করণীয় হচ্ছে উঠে বসে পড়া, গরম পানি পান করা, প্রাকৃতিক উপায়ে উপশমের চেষ্টা করা এবং দ্রুত অস্থির না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করা। এরপর প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি না হয়। সুস্থ থাকতে হলে শুধু উপশম নয়, বরং প্রতিরোধই হতে হবে প্রধান লক্ষ্য।
এম.কে.