
হার্ট অ্যাটাক শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য। কিন্তু বাস্তবতা আরও জটিল। হৃদযন্ত্রের অনেক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে যায় নীরবেই, কোনও উপসর্গ ছাড়াই। চিকিৎসা পরিভাষায় যেটিকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ বা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক।
এই নীরব হৃদরোগ বহু ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে অনেক পরে ইসিজি বা স্ট্রেস টেস্টের মাধ্যমে। তখন ততক্ষণে হৃদযন্ত্রে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তাই সময় থাকতে সতর্ক না হলে এ ধরনের হার্ট অ্যাটাক প্রাণঘাতী হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক কীভাবে ঘটে?
হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ কমে যায় বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি হয় করোনারি আর্টারিতে জমে থাকা ফ্যাট বা প্ল্যাকসের কারণে। রক্তে অক্সিজেনের অভাবে হার্টের কোষ মারা যেতে থাকে। সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে বুকে চাপ, ঘাড়, চোয়াল বা কাঁধে অস্বস্তি থাকে। তবে সব সময় এমন উপসর্গ দেখা যায় না।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক কেন চোখে পড়ে না?
অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারে না, তারা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। পরবর্তীতে যখন রুটিন চেকআপে ইসিজি বা স্ট্রেস টেস্ট করা হয়, তখন চিকিৎসক বুঝতে পারেন আগেই হৃদযন্ত্রে ক্ষতি হয়েছে। সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের সময় শরীর কিছু হালকা সংকেত পাঠায় হালকা ক্লান্তি, হজমের গোলমাল বা কয়েক মুহূর্তের শ্বাসকষ্ট। কিন্তু এগুলোর পেছনে হৃদরোগ আছে তা অনেকেই ভাবেন না।
হার্ট অ্যাটাক রোধে কীভাবে জীবনযাপন পরিবর্তন করবেন?
১. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন: উচ্চ কোলেস্টেরল দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে রক্তনালিতে প্ল্যাক জমে রক্তপ্রবাহ আটকে যেতে পারে। এটি হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ।
২. সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করুন: আঁশযুক্ত খাবার খান, ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন, শরীরচর্চা করুন, ধূমপান ছেড়ে দিন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ভালো ঘুমও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান: রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন এবং পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিন।
৪. অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল ট্রাইগ্লিসারাইড ও রক্তচাপ বাড়ায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণা বলছে, করোনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ হৃদ্রোগ-সংক্রান্ত ইভেন্ট ঘটে বিনা উপসর্গে। মধ্যবয়সীদের মধ্যে ট্রেডমিল পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ২-৪ শতাংশ পুরুষের রয়েছে সাইলেন্ট ইসকেমিয়া।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক আসলে হার্ট অ্যাটাকের মোট ঘটনার প্রায় ২০-৩০ শতাংশের জন্য দায়ী। মনে রাখবেন, হৃদ্রোগ সব সময় হঠাৎ আসে না। অনেক সময় এটি নীরবে গা বাঁচিয়ে আসে, কিন্তু রেখে যায় চিরস্থায়ী ক্ষতি।
তাই হৃদযন্ত্রের সংকেতকে অবহেলা করবেন না। সময় থাকতেই সচেতন হোন, নিয়মিত চেকআপ করুন আর নিজের শরীরের কথায় মন দিন। জীবনের গতি না থামিয়ে, গড়ে তুলুন হৃদয়বান্ধব জীবনশৈলী।
সূত্র:https://tinyurl.com/34snnd4b
আফরোজা