
জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে রবিবার নেত্রকোনার পুরানো কালেক্টরেট চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, মুজিববাদ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সে সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষার জন্য আমরা কাজ করে যাব। আমরা একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে চাই, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে স্বপ্ন নিয়ে তরুণ সমাজ রাজপথে নেমে এসেছিল, শহীদ ভাইয়েরা জীবন দিয়েছিল, সেই স্বপ্নের কথা, সেই আকাক্সক্ষার কথা বলতেই আমরা প্রতিটি জেলায় যাচ্ছি। আমরা মনে করি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
যে ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষকে নির্যাতন করেছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন করেছে, জনগণের অধিকার হরণ করেছে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে তরুণ ও সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে এসে জুলাই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল, ১৬ বছর যারা মানুষকে নির্যাতন করেছে, অসংখ্য গণহত্যা করেছে, মানুষের টাকা লুট করেছে, সেই ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তার বাহিনীর বিচার করা।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবির পাশাপাশি দেশব্যাপী সংস্কারের দাবি নিয়ে, নতুন একটা সংবিধানের দাবি নিয়ে আমরা পথে নেমেছি। এই নতুন সংবিধানের জন্য আমাদের একটা গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে। যে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, অভ্যুত্থানকারী জনতা আগামীর সংবিধান নির্ধারণ করবে।
রবিবার বেলা ১টার দিকে নেত্রকোনা জেলা সদরের পুরানো কালেক্টরেট চত্বরে জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনসিপিরি মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম সোহাগ, ফাহিম রহমান খান পাঠান, রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ। এ সময় মঞ্চে এনসিপির দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তরুণদের উদ্দেশ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠিত হয়েছে।
তরুণদের ক্ষমতায়িত করে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির, সকল বয়সের মানুষের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই। যারা বয়োজ্যেষ্ঠ রয়েছেন, তারা আমাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবেন। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে পরামর্শ দিবেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি সাধারণ মানুষের অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।
নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী তার বক্তব্যে বলেন, আমরা দলীয়ভিত্তিক সংবিধান বাদ দিয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন একটি সংবিধান চাচ্ছি। আমরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছি, যাতে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু যারা ফ্যাসিস্টের মতো ক্ষমতায় থাকতে চায় তারা বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিডিআর হত্যাকা-, শাপলা চত্বরের হত্যাকা-, বিএনপি-জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মীর গুম-খুনের বিচার চাচ্ছি।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাষ্ট্র রাখা যাবে না ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর থেকে জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যে কারণে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি হল, সেই রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাষ্ট্র রাখা যাবে না। একটা রাষ্ট্রে শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছেই ক্ষমতা, সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা পরিবর্তন করতে চাই।
এজন্য আমরা বলেছি উচ্চ কক্ষ লাগবে এবং সেই উচ্চকক্ষ অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারি। যদি মৌলিক সংস্কার না হয়, যদি এ জুলাই সনদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তাহলে জুলাই সনদে জাতীয় নাগরিক পার্টি সমর্থন দেবে না। তিনি এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার সন্ধ্যায় শেরপুর শহরের থানা মোড়ে আয়োজিত এক বিশাল পথসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওইসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে যে কোনো মূল্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। সঙ্গে জুলাই ঘোষণাপত্রও ঘোষণা করতে হবে। ঐক্যমত কমিশন বলেছে দুই-তিনদিনের মধ্যে জুলাই সনদের কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। যদি এটি ঘোষণা করা না হয়, তাহলে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় না করে আমরা ঢাকার শহীদ মিনার ছাড়ব না।
তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্যময় এলাকা শেরপুরে প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বনাঞ্চল উজাড় করার কারণে বন্যহাতির দল লোকালয়ে চলে আসে। হাতির পায়ে পদদলিত হয়ে বিভিন্ন মানুষ মারা যাচ্ছে। শেরপুরে হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসা নাই, শিক্ষা নাই। শেখ হাসিনা শাসনামলে শেরপুর শাসন করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেরপুর প্রকৃত উন্নয়ন পায়নি। উন্নয়ন পেয়েছে শুধু আওয়ামী দোসররা-সন্ত্রাসীরা, যারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পলাতক আছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়েছিল। সেই দিল্লিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাজারও সন্ত্রাসীদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু শেরপুর সীমান্তসহ দেশের অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারত পুশ ইন করে জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা ভারত সরকারকে স্পষ্টভাবে বলেছি যে, সীমান্তে কোনো হত্যাকা- মেনে নেব না, কোনো পুশইন মেনে নেব না। পুশইন করতে হলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের পুশইন করুন, শেখ হাসিনাকে পুশইন করুন। আমরা বিচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব।
এর আগে শহরের কলেজমোড়স্থ শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে জুলাই পদযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানামোড়স্থ শহীদ স্কয়ারে এসে শেষ হয়।
ওই সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম-সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্যানেল হু