
ছবি: সংগৃহীত।
মরিঙ্গা বা সজনে গাছ বহুদিন ধরেই আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যতালিকার অংশ। তবে আধুনিক গবেষণায় এখন একে বলা হচ্ছে 'মিরাকল ট্রি' বা 'অলৌকিক গাছ'। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন-ফুসফুস, কিডনি ও লিভার পরিষ্কারে মরিঙ্গা হতে পারে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপায়। এটি কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন) কমাতেও সহায়ক।
নিচে মরিঙ্গা খাওয়ার ৭টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত গোপন উপকারিতা তুলে ধরা হলো, যা শরীরের ডিটক্স প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিকভাবে সক্রিয় করে:
১. ফুসফুসকে রক্ষা করে শক্তিশালী ফাইটোকেমিক্যাল:
মরিঙ্গা পাতায় কোয়ারসেটিন ও ক্যাম্পফেরলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান থাকে। এগুলো ফুসফুসের বায়ুপথকে প্রশস্ত করে এবং ফুসফুসে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শহরের দূষিত বাতাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।
২. কিডনি ফিল্টার পরিষ্কারে সালফারযুক্ত যৌগ:
মরিঙ্গায় গ্লুকোসিনোলেট নামের সালফারযুক্ত যৌগ থাকে, যা শরীরে গিয়ে আইসোথায়োসায়ানেটে রূপান্তরিত হয়। এই উপাদান কিডনির ডিটক্স এনজাইমকে সক্রিয় করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি কোষ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
৩. কর্টিসল কমাতে অ্যাডাপ্টোজেনিক প্রভাব:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মরিঙ্গা পাতার গুঁড়া কর্টিসল হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল অ্যাডরিনাল গ্রন্থিতে কাজ করে, যার ফলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪. অ্যালকালাইন প্রভাব: ফুসফুস ও কিডনির জন্য সহায়ক:
মরিঙ্গা হজমের পরে শরীরে অ্যালকালাইন অবশিষ্ট রেখে যায়, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ পিএইচ ব্যালেন্স রক্ষা করতে সহায়ক। অতি অ্যাসিডিক খাদ্যাভ্যাসে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।
৫. রক্ত পরিশোধনে সহায়ক ক্লোরোফিল:
মরিঙ্গা পাতার সবুজ রঙে থাকা ক্লোরোফিল ভারী ধাতু ও রক্তে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এতে রক্ত পরিষ্কার থাকে এবং কিডনি ও ফুসফুসের ওপর চাপ কমে যায়।
৬. ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মা পরিষ্কারে কার্যকর:
মরিঙ্গায় থাকা ভিটামিন সি ও বায়োফ্ল্যাভনয়েড শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে। এর ফলে ফুসফুসের ভেতরে জমে থাকা কফ সহজে বেরিয়ে যায়, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য সহায়ক।
৭. লিভারের ডিটক্স কার্যক্রমে সহায়ক:
মরিঙ্গায় থাকা নিয়াজিমিসিন ও স্যাপোনিন যৌগ লিভারের দুটি প্রধান ডিটক্স প্রক্রিয়া—ফেজ ১ ও ফেজ ২—কে সক্রিয় করে। ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান সহজে বেরিয়ে যায়, যা পরোক্ষভাবে কিডনি ও ফুসফুসের ওপর চাপ কমায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিতভাবে মরিঙ্গা পাতা (তাজা বা গুঁড়া আকারে) খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীরের স্বাভাবিক ডিটক্স ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা যায়। এটি একদিকে যেমন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, অন্যদিকে মানসিক চাপ হ্রাসেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সতর্কতা: যেকোনো ভেষজ উপাদান নিয়মিত গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান