ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

রাতেও সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন 

ইয়াহু নিউজ

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ২৭ জুলাই ২০২৫

রাতেও সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন 

রাতেও সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন

সৌরশক্তি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন এসেছে। যেখানে সোলার প্যানেল এখন শুধু দিনের বেলা নয়, রাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। এই নতুন প্রজন্মের সোলার প্যানেল যা ‘নাইটটাইম সোলার প্যানেল’ নামে পরিচিত। রেডিয়েটিভ কুলিং নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এই প্রযুক্তি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএনএসডব্লিউ) গবেষকদের দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

এটি ঐতিহ্যবাহী সোলার প্যানেলের তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও রাতের বেলা শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা সৌরশক্তির ভবিষ্যৎকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাচ্ছে। প্রচলিত সোলার প্যানেল সূর্যের আলোর ফোটন শোষণ করে ফটোভোলটাইক (পিভি) সেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কিন্তু রাতে সূর্যালোক না থাকায় এই প্যানেলগুলো কাজ করে না। নতুন প্রজন্মের সোলার প্যানেল রেডিয়েটিভ কুলিং নামক একটি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। রাতে পৃথিবী তার শোষিত তাপ ইনফ্রারেড আলোর মাধ্যমে মহাশূন্যে নির্গত করে। এই প্রক্রিয়ায় সোলার প্যানেলের পৃষ্ঠ তাপমাত্রায় পার্শ্ববর্তী বাতাসের তুলনায় ঠান্ডা হয়ে যায়।

এই তাপমাত্রার পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে একটি থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (টিইজি) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০২২ সালে একটি পরীক্ষায় দেখিয়েছেন, এই প্রযুক্তি রাতে প্রতি বর্গমিটারে ৫০ মিলিওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। যদিও এটি দিনের বেলা সোলার প্যানেলের তুলনায় অনেক কম (দিনে প্রায় ১০০-২০০ ওয়াট প্রতি বর্গমিটার) তবুও এটি কম শক্তির প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন যেমন এলইডি লাইট, মোবাইল ফোন চার্জিং বা পরিবেশগত সেন্সর চালানোর জন্য যথেষ্ট।

ইউএনএসডব্লিউর গবেষকরা থার্মোরেডিয়েটিভ ডায়োড নামক একটি সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ব্যবহার করে ইনফ্রারেড আলো নির্গত করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন, যা রাতের বেলা প্যানেলের তাপমাত্রা হ্রাসের মাধ্যমে কাজ করে। এই প্রযুক্তি বিশ্বের প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যারা এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে দুর্গম অঞ্চলে, যেখানে গ্রিড সংযোগ নেই, এই প্যানেলগুলো রাতে আলো এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। গবেষক শানহুই ফ্যান বলেন, মহাশূন্যের ঠান্ডা তাপমাত্রা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস।

তিনি আরও জানান, এই প্রযুক্তি প্রচলিত সোলার প্যানেলে সহজেই একীভূত করা যায় এবং এর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। মেঘলা রাতে ইনফ্রারেড বিকিরণ পৃথিবীতে ফিরে আসে, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ ছাড়া বর্তমানে উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, আরও উন্নত ডিজাইন এবং উপকরণ ব্যবহার করে এই প্রযুক্তির দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।

ইউএনএসডব্লিউর অধ্যাপক নেড একিন্স ডকস বলেন, এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য আরও এক দশকের গবেষণা প্রয়োজন। তবে শিল্পের সমর্থন পেলে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি সৌরশক্তির ২৪ ঘণ্টা ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বর্তমানে সোলার প্যানেল রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যাটারি স্টোরেজ বা নেট মিটারিংয়ের উপর নির্ভর করে। কিন্তু নাইটটাইম সোলার প্যানেল এই নির্ভরতা কমাতে পারে। এটি শুধু গ্রিড-নির্ভরতা হ্রাস করবে না, বরং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশ সুরক্ষায়ও অবদান রাখবে। এক্সে এই প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। -ইয়াহু নিউজ

×