ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

দোষে দোষী না হয়েও বহিষ্কারে তৃণমূল বিএনপিতে হতাশা, ক্ষোভ!

নূরুল ইসলাম তালুকদার, টঙ্গী

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২৭ জুলাই ২০২৫

দোষে দোষী না হয়েও বহিষ্কারে তৃণমূল বিএনপিতে হতাশা, ক্ষোভ!

অভিযোগের দোষে দোষী না হয়েও সারাদেশে বিভিন্ন অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার, শোকজ ও অব্যাহতির ঘটনায় তৃণমূল বিএনপির ত্যাগী নেতাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় বিপক্ষ নেতাদের দলীয় কোন্দল ও রোষানলে পড়ে অনেক স্থানীয় নেতা বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন। এতে নিরপরাধ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দোষ না করেও যারা সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় পড়েছেন, তারা তাদের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর আশ্বস্ত করেছে, যারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করেও বহিষ্কার বা অব্যাহতির শিকার হয়েছেন, যাচাই-বাছাই করে তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করা হবে। এমন আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা। এমনকি বহিষ্কার চিঠি ইস্যুর এক মুহূর্ত আগেও অনেক শীর্ষ নেতা জানতেন না, তাদের অনুসারী স্থানীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে!

গত ১১ মাসে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩,২৩৩ জন স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এদের মধ্যে অনেকেই নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও দলীয় দ্বন্দ্ব ও নেতাদের বিরাগভাজন হয়ে শাস্তির আওতায় পড়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ আবেদন জমা পড়েছে দপ্তরে, যার মধ্যে ২০০ জন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

দল থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অনেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই, যা তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে শঙ্কা ও হতাশা সৃষ্টি করেছে। টঙ্গী গাজীপুর মহানগর বিএনপির ৫ নেতাকে বহিষ্কার করা হয় চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসা দখল, ককটেল বিস্ফোরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে। কিন্তু এদের মধ্যে দুই জন কোনো অপরাধে জড়িত না হয়েও বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন।

গাজীপুর-২ আসনের এমপি প্রার্থী রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত না থাকলেও প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রে বহিষ্কারের শিকার হন। বহিষ্কারের সময় তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বহিষ্কারে পুরো গাজীপুরে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, পাপ্পু সরকার ছিলেন কেন্দ্রীয় এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ। প্রতিপক্ষরা তাকে দল থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ তোলে। এলাকাবাসীর দাবি, আন্দোলনে পাপ্পু সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ত্যাগ উপেক্ষা করে তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ৩৬টি মামলার আসামি হয়েছেন।

৫ আগস্টের পর গাজীপুর মহানগর বিএনপি বিভক্ত হয়ে ৫-৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। এসব গ্রুপের নেতৃত্বে কেউ খালেদা জিয়া, কেউ তারেক রহমান, কেউবা মির্জা ফখরুল বা নজরুল ইসলাম খানের অনুসারী হয়ে উঠেছেন। পাপ্পু সরকারও ছিলেন একটি কেন্দ্রীয় গ্রুপের আশীর্বাদপুষ্ট নেতা।

দলের কেন্দ্রীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩,২৩৩ জনের মধ্যে মূল দলের ১,৮০০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ জন বহিষ্কৃত, ৫০ জনের পদ স্থগিত, ৭০০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ১০০ জনকে সতর্ক এবং ১৫০ জনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দল শৃঙ্খলা রক্ষায় শূন্য সহনশীলতার নীতিতে অটল। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির কারণে নিরপরাধরা শাস্তির শিকার হয়েছেন।” তিনি আশ্বাস দেন, নির্দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তি প্রত্যাহার করা হবে।

তৃণমূল নেতাদের মতে, বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি নতুন সম্ভাবনার দিকে এগোলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় প্রতিহিংসা এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তে নিরপরাধ নেতারা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।

সানজানা

×