ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

দোষে দোষী না হয়েও বহিষ্কারে তৃনমুল বিএনপিতে হতাশা, ক্ষোভ!

নূরুল ইসলাম তালুকদার, টঙ্গী

প্রকাশিত: ১৮:২১, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:২২, ২৭ জুলাই ২০২৫

দোষে দোষী না হয়েও বহিষ্কারে তৃনমুল বিএনপিতে হতাশা, ক্ষোভ!

ছবি: জনকণ্ঠ

অভিযোগের দোষে দোষি না হয়েও সারাদেশে বিভিন্ন অভিযোগে স্হনীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার শোকজ ও অব্যহতির ঘটনায় তৃনমুল বিএনপির ত্যাগি নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ হতাশা নেমে এসেছে। স্হানীয় এবং কেন্দ্রীয়বপ্রতি পক্ষ নেতাদের দলীয় কোন্দল এবং রোষানলে পড়ে অনেক স্হানীয় নেতারা দল থেকে বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন। এতে নিরপরাধ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দোষ না করেও যারা সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় পড়েছেন তারা তাদের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে।

 


ক্ষতিগ্রস্হদের বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর আশা দিয়েছেন যারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করেও বহিষ্কার, অব্যহতির শিকার হয়েছেন যাচাই বাছাই করে তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। এমন আশার কথা শুনিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের নেতারা। বহিষ্কার চিঠি ইস্যু করার একমুহূর্ত আগেও অনেক শীর্ষ নেতৃত্বের অনেক নেতা জানেনই না তার অনুসারী স্হানীয় নেতাকে বহিষ্কারে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে! 

গত ১১ মাসে নানা অভিযোগে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৩ হাজার ২শ' ২৩ জন স্হানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্হা নেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। এদের মধ্যে কোন দোষে দোষী না হয়েও কেন্দ্রীয়, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নেতাদের বিরাগভাজন হয়ে অনেকে শাস্তির আওতায় পড়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে শাস্তির পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা পড়েছে প্রায় দেড় হাজার। ইতোমধ্যে অভিযোগ যাচাইয়ে অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি ২শ' জন স্হানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে।

 

 

 

দল থেকে বহিষ্কার, অব্যহতি প্রাপ্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্হা নেওয়ায় অনেকে ঢালাও বহিষ্কারে অবিচারের শিকার হয়েছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা শঙ্কায় ভুগছেন। দলের বিভিন্ন স্তরে ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে টঙ্গী গাজীপুর মহানগর বিএনপির নিজ দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসার দখল, ককটেল বিস্ফোরণে আহত ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ দেখিয়ে টঙ্গীর ৫ বিএনপি নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

এদের মধ্যে দুই জন কোন দোষে দোষী না হয়েও বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত না থাকা সত্বেও বিএনপির গাজীপুর-২ আসনের এমপি প্রার্থী রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু। গাজীপুর-২ আসনের এমপি মনোনয়ন প্রতিপক্ষরা নিজেদের কব্জায় নিতে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুকে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ঘটনা সামনে এনে দল থেকে বহিষ্কারের আয়োজন সম্পন্ন করে। বহিষ্কারের নোটিশ জারির সময় পাপ্পু সরকার সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পাপ্পু সরকারের বিএনপি থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় পুরো গাজীপুরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নিজ নেতার বহিষ্কারে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছেন এলাকার শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। স্হানীয় নেতৃত্ব ও নেতাকর্মীরা পাপ্পু সরকারের বহিষ্কারাদেশে হতবাক। তারা বলছেন, পাপ্পু সরকার স্হানীয় ও কেন্দ্রীয় দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিংয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বহিষ্কার হয়েছেন। নেতাকর্মীরা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার শেখ হাসিনার শাসনকে চ্যালেন্জ করে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এক দফার আন্দোলন করতে গিয়ে ৩৬ জুলাই আন্দোলনে ৩৬ রাজনৈতিক মামলার আসামিও হয়েছেন পাপ্পু সরকার।

৫ আগষ্টের পর গাজীপুর মহানগর বিএনপি মূলত ৫/৬ টি ভাগে বিভক্ত হয়ে স্হানীয় নানা নেতার গ্রুপের নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অপরদিকে স্হানীয় নেতৃত্বের নেতারাও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার, কেউ তারেক রহমানের, কেউবা মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের, আবার কেউবা নজরুল ইসলাম খানের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে নানা গ্রুপিংয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পাপ্পু সরকারও ছিলেন এমন একজন কেন্দ্রীয় সর্ব শীর্ষ নেতার আশীর্বাদপুষ্ঠ স্হানীয় নেতা।

শীর্ষ নেতৃত্বের গ্রুপিংয়ের কবলে পড়ে বহিষ্কারের শিকার হন গাজীপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু গাজীপুর-২ আসন থেকে এমপি ইলেকশন করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে যখন প্রতিদিন ক্যাম্পেইন মিটিং মিছিল করছেন ঠিক তখনই তার বিরোধী পক্ষ শীর্ষ নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে তার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দলের স্হানীয় নেতাকর্মীরা দাবি করছেন। স্হানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,  স্হানীয়ভাবে রাজনীতিতে পেরে না উঠায় অনেকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ দিচ্ছেন। 

 

 

 

এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত না থাকা সত্বেও বিএনপির এমপি মনোনয়ন অন্যরা নিজেদের কব্জায় নিতে পাপ্পু সরকারের স্হানীয় প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ঘটনা সামনে এনে দল থেকে বহিষ্কারের আয়োজন সম্পন্ন করে। পাপ্পু সরকারের বিএনপি থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় পুরো গাজীপুরে তীব্র ক্ষোভের ঝড় বইছে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। স্হানীয় নেতৃত্ব ও নেতাকর্মীরা পাপ্পু সরকারের বহিষ্কারাদেশে হতবাক। তারা বলছেন পাপ্পু সরকার স্হানীয় দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিংয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বহিষ্কার হয়েছেন। নেতাকর্মীরা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার শেখ হাসিনার শাসনকে চ্যালেন্জ করে রাজপথে মোকাবেলা করতে গিয়ে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

দোষে দোষী না হয়েও ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে যখন বিএনপির সুদিন ফিরে এসেছে, নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তখনই নানা অজুহাতে দলীয় শাস্তির আওতায় পড়তে হচ্ছে স্হানীয় নিরপরাধ অনেক বিএনপি নেতাদের। নেতিবাচক কাজে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই এমন নেতাকর্মীরা বহিষ্কার হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক জীবন চরম ঝুঁকিতে পড়ছে। বহিস্কৃত এমন নেতারা এর প্রতিকার চেয়ে দলের কাছে আবেদন করেছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জানা গেছে, ৫ আগষ্টের পর থেকে এ পর্যন্ত নানা অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩ হাজার ২শ' ২৩ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মূল দল বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছেন ১ হাজার ৮শ' জন। তাদের মধ্যে ৮শ' জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, ৭শ' জনের উপরে কারণ দর্শানো নোটিশ, ১শ' জনকে সতর্ক এবং ১শ' ৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের প্রায় ৪শ' জন বহিষ্কার ও ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানো নোটিশ, স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১শ' জন নেতাকর্মী বহিষ্কার ও ১শ' ৫০ জন কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়েছেন। যুবদলেরও দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকে জানেনও না কি জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে দল। এমন নেতাকর্মীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তারা এখন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দলীয় শাস্তি প্রত্যাহারে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একপক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বহিষ্কার করিয়েছে। অথচ অভিযোগকারীদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার হঠাও আন্দোলনে মাঠেই ছিল না।

গত ৬ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রাকিব


উদ্দিন সরকার পাপ্পুর বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে দল থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি তাকে। ব্যবস্থা নেওয়ার কারণও জানতে পারেনি সে। রাকিব উদিল সরকার জানান, ১২ বছর ৩ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। যেদিন তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এর কয়েকদিন আগে থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এলাকার নেতাকর্মীরা জানান, পারিবারিকভাবে রাকিব:উদ্দিন সরকার পাপ্পুরা ধনাট্য ব্যাক্তি। নিজে একজন সফল ব্যবসায়ী। তাঁকে চাঁদাবাজের তকমা লাগিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাপ্পু সরকারের বহিষ্কারে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও হতবাক।

ঢালাও বহিষ্কার, অব্যহতির বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র মুখ্য মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি তার স্বচ্ছ ইমেজ ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এর পরও দলকে নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে, টার্গেট করে অপপ্রচার চলছে। তাই শৃঙ্খলা রক্ষায় শূন্য সহনশীলতা নীতিতে অটল দলটি। তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিংবা সংবাদমাধ্যমে অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষেত্র বিশেষে নিরপরাধ নেতাকর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব নেতাকর্মীর বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে, তদন্ত চলছে। নির্দোষ প্রমাণিত হলে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে নেয়া সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তুলে নেয়া হবে।

দলের কেন্দ্রীয় অফিস সূত্র জানা গেছে, ইতোমধ্যে সাংগঠনিক শাস্তি পুনর্বিবেচনা বা তুলে নেয়ার জন্য প্রায় দেড় হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২শ' আবেদন আছে যারা উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক টঙ্গীর রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুও রয়েছেন। এদিকে স্থানীয় নেতারা লিখিতভাবে কেন্দ্রকে যে তথ্য দিয়েছেন তার মধ্যে অভিযুক্ত না থাকাদের তালিকা প্রায় ১৫%।

ছামিয়া

×