
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সংস্কারে রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনে বিএনপি সচেতনভাবে সামনের দিকে এগুচ্ছে’।
রোববার দুপুরে এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘অনেকে আজকাল অনেক কথা বলছেন, সংস্কার হচ্ছে। সংস্কার তো আমরা অনেক আগেই থেকে উপলব্ধি করেছি। আমরা ২০১৬ সালে প্রথম ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছি যেখানে আমাদের সমস্ত পরিবর্তনের কথা, সংস্কারের কথা আমরা প্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি... আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ৩১ দফা দিয়েছেন… সেই ৩১ দফাই আজকের সংস্কার বিষয়ক কমিটিগুলোর আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত।”
‘‘সুতরাং আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে অত্যন্ত সচেতন যে, জনগণের যা প্রয়োজন এবং কালের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রকাঠামোর যে পরিবর্তন দরকার, তার ব্যাপারে আমরা সচেতন... সচেতনভাবেই আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি।”
মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে ‘ফারাক্কা ব্যারেজ ও বাংলাদেশের সংকট: পদ্মা ব্যারেজ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। ‘দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর আবশ্যিকতা’ নিয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী শহিদুল ইমাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিমানের পাইলট তৌকির ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু ওহাব মো. হাফিজুল হক।
‘জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সবকিছুই নির্ভর করে মানুষের ওপর। আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন করেছি, ’৬৯-এ আন্দোলন করেছি এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আজ এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছি যে, এই জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা পারি—যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, আমরা অবশ্যই পারব।”
‘‘আমি একজন রাজনীতিক হিসেবে বুঝি, আমার দেশের মানুষের স্পন্দন আমি বুঝি। মানুষ উন্নতি চায়, একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়, যার মাধ্যমে দেশের সকল সমস্যার সমাধানে পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।”
‘দ্বিতীয় পদ্মা সেতু: খালেদা জিয়ার প্রতিশ্রুতি আছে’
‘‘প্রায় আট কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা পদ্মা ব্যারেজ ও পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত। সাতবার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরও এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি—এটি দুর্ভাগ্যজনক। ফারাক্কা ব্যারেজের বিরূপ প্রভাবে আজ কেবল ফরিদপুর বা রাজবাড়ি নয়, পুরো দক্ষিণাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
“দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনেক আগেই প্রতিশ্রুতি ছিল। এটি কেবল পরবর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়—জনগণেরও সজাগ থাকতে হবে।”
‘দেশ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে’
ব্র্যাকের চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে আছে। কেবল কাঠামোগত নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনীতির পথচলার বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি এবং শাসনের চরিত্র জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মেলানো জরুরি।”
‘নতুন সরকারকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে’
সিপিডি’র ফেলো, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “ফারাক্কার কারণে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ও জমি প্রকটভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আগামী বছর গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে—কিন্তু এখনও নতুন করে কীভাবে দর-কষাকষি করব, সেই আলোচনার কোনো সাড়া নেই।”
তিনি বলেন, “নতুন সরকার এলে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা ও সংশোধিত বাজেটে পদ্মা ব্যারেজ প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।”
‘পদ্মা ব্যারেজ প্রসঙ্গে’
পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, “গঙ্গা ব্যারেজ না হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ হবে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা অঞ্চলে জনসংখ্যা কমছে—মানুষ পালাচ্ছে। কারণ, বসবাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। ১০ হাজার কিউসেক পানি যশোর-খুলনায় দিতে পারলেই অঞ্চলটি রক্ষা পাবে।”
তিনি বলেন, “এটা ১৮ আনাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা কারিগরি বিষয় বলি, কিন্তু সিদ্ধান্ত আসে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকেই।”
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র সভাপতি, সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। বক্তব্য রাখেন সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, মিজানুর রহমান মিনু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী, প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান, প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর হোসেন খান জালাল।
সানজানা