
ছবিঃ সংগৃহীত
নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি কথা বলেন—এই প্রচলিত ধারণাটি অনেক পুরনো। কিন্তু সত্যিই কি নারীরা সবসময় বেশি কথা বলেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে Journal of Personality and Social Psychology-তে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণা। চারটি দেশের ২,১৯৭ জন অংশগ্রহণকারীর উপর চালানো এই গবেষণা বলছে, নারীরা নির্দিষ্ট বয়সে পুরুষদের তুলনায় বেশি কথা বলেন ঠিকই, তবে সেই ব্যবধান সব বয়সে সমান নয়—এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটিও পাল্টে যায়।
কখন এবং কেন নারীরা বেশি কথা বলেন?
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার কলিন টিডওয়েল। তিনি চেষ্টা করেছেন ২০০৭ সালের এক বহুল আলোচিত গবেষণার পুনরাবৃত্তি করতে। সেই পুরনো গবেষণায় বলা হয়েছিল, পুরুষ ও নারীরা দিনে গড়ে প্রায় ১৬,০০০টি শব্দ ব্যবহার করেন, যা কার্যত সমান। তবে সেই গবেষণার নমুনা ছিল খুবই ছোট এবং প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়েই সীমাবদ্ধ।
নতুন এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বয়স, পেশা ও সামাজিক পটভূমি ছিল অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এতে ব্যবহার করা হয় EAR (Electronically Activated Recorder) নামের একটি ছোট রেকর্ডিং ডিভাইস, যা দিনের বিভিন্ন সময়ে অডিও ক্লিপ ধারণ করত। যেহেতু অংশগ্রহণকারীরা জানতেন না কখন ডিভাইসটি রেকর্ড করছে, তাই তাদের স্বাভাবিক কথোপকথনেই তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
কী বলছে গবেষণার ফলাফল?
২৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে নারীরা দিনে গড়ে ১৩,৩৪৯টি শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেখানে পুরুষরা ব্যবহার করেছেন গড়ে ১১,৯৫০টি শব্দ—প্রায় ১,৪০০ শব্দের পার্থক্য। এটি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত "নারীরা বেশি কথা বলেন" ধারণার সঙ্গে কিছুটা সঙ্গতিপূর্ণ।
তবে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ বয়সীদের মধ্যে এই ব্যবধান ছিল প্রায় অদৃশ্য। আর ৬৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বে বয়সীদের মধ্যে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র—সেখানে পুরুষরা নারীদের চেয়ে গড়ে ৭৮৮টি বেশি শব্দ ব্যবহার করেন প্রতিদিন।
এর পেছনে সম্ভাব্য কারণ কী?
গবেষকরা মনে করছেন, এই ব্যবধানের পেছনে থাকতে পারে বিভিন্ন জৈবিক ও সামাজিক কারণ। উদাহরণস্বরূপ, নারীদের দেহে বেশি পরিমাণে থাকা হরমোন ‘এস্ট্রাডিওল’ কথার প্রকাশে সহায়ক হতে পারে। তবে সামাজিক প্রেক্ষাপটও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেহেতু পেশাগত পরিবেশে রেকর্ড করা হয়নি, গবেষণার তথ্য এসেছে মূলত পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময় থেকেই—যেখানে নারীরা, বিশেষ করে যারা শিশুদের দেখভাল করেন, বেশি কথা বলার প্রবণতা দেখাতে পারেন।
সীমাবদ্ধতা কী ছিল গবেষণায়?
যদিও এই গবেষণাটি আগের তুলনায় অনেক বড় পরিসরে পরিচালিত, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এতে মাত্র চারটি দেশের তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, লিঙ্গ পরিচয় ও যৌন অভিযোজনের প্রতিনিধিত্ব ছিল সীমিত। পাশাপাশি পেশাগত ক্ষেত্রের কথোপকথন অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি, যেখানে নারীদের কথাবার্তার ধরন ভিন্ন হতে পারে।
তাহলে নারীরা কি সত্যিই বেশি কথা বলেন?
উত্তর—"সব সময় নয়"। গবেষণার সবচেয়ে নিশ্চিত ফলাফল হলো: কর্মজীবী বয়সে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি কথা বলেন। কিন্তু অন্য বয়সে এই ব্যবধান প্রায় নেই বললেই চলে, কিংবা কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরা এগিয়ে।
সারকথা, "বেশি কথা বলা নারীদের স্বভাব"—এই প্রচলিত ধারণাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। বরং মানুষের বয়স, পরিস্থিতি, পরিবেশ ও জৈবিক প্রেক্ষাপটে কে কতটা কথা বলছেন, তা ভিন্ন হতে পারে। ভবিষ্যতের গবেষণা হয়তো এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করবে।
ইমরান