
ছবিঃ সংগৃহীত
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তেল আবিবের সহায়তায় সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রিয়াদ। এমন কঠিন সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক প্রস্তাব নাকচ নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে সৌদির অবস্থান নিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তাও বহন করে।
চলতি বছরের ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল। এর পাল্টা জবাবে আয়াতুল্লাহ আলীর বাহিনী ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের ওপর ১২ দিনব্যাপী চালায় ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি—মোট ৪২টি দফায়। এতে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ থার্ড-লেভেল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসে মিত্র ইসরায়েলকে রক্ষা করতে। তখনই ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি আরবকে অনুরোধ জানায়, কিছু ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে। কিন্তু সৌদি আরব সেই অনুরোধ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি কিছু লেনদেনের প্রস্তাব দিয়েও রিয়াদকে রাজি করাতে পারেনি ওয়াশিংটন।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Middle East Eye জানায়, যুদ্ধের সময় ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ব্যবহৃত ইন্টারসেপ্টর অস্ত্র মজুদ প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তখন সৌদি আরবের থার্ড ব্যাটারি ব্যবহার করতে চেয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। এ বিষয়ে দুইজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, “সৌদিকে অনুরোধ করা হয়েছিল, এমনকি অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সৌদি রাজি হয়নি।”
যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের অনুরোধ জানায় সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও, যারা ২০১৬ সাল থেকে থার্ড প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। তবে তারা ইসরায়েলকে সাহায্য করেছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
সৌদির এই প্রত্যাখ্যান ওয়াশিংটনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। বিশেষ করে তখন, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষা কাঠামো গড়তে চেয়েছিল—যাকে অনেকেই "মধ্যপ্রাচ্যের নেটো" বলেও অভিহিত করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজা, লেবানন, পশ্চিম তীর ও সিরিয়ায় ইসরায়েলের একতরফা আগ্রাসনের কারণে আরব দেশগুলো এখন ইসরায়েলকে বন্ধু নয়, প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে। Eurasia Group–এর মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরাস মাকসাদ বলেন, “ইসরায়েলের লাগামহীন আগ্রাসনের কারণে সৌদি আরবের অবস্থান আগের চেয়ে কঠিন হয়েছে। ইরান দুর্বল হলেও সৌদি এখন তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, এমনকি ইরানের দিকেও কিছুটা ঝুঁকছে।”
এই ঘটনাপ্রবাহ শুধু সামরিক সহায়তার ইস্যু নয়; বরং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরণের পুনর্গঠনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে।
ইমরান