
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন,‘‘২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এখন সেই দিল্লিতেই তিনি তার হাজার হাজার সন্ত্রাসীদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু শেরপুরসহ দেশের সীমান্তে প্রতিদিন ভারত থেকে পুশ-ইন হচ্ছে। আমরা ভারত সরকারকে স্পষ্ট বলেছি—সীমান্ত হত্যা বা পুশ-ইন কোনোভাবেই মেনে নেব না। যদি পুশ-ইন করতেই হয়, তাহলে শেখ হাসিনা ও তার সন্ত্রাসীদের করুন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যে কারণেই দেশে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, সেই রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার জরুরি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চলতে পারে না। যেখানে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত, সেই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আমরা পরিবর্তন করতে চাই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘উচ্চকক্ষ (সেনেট) চালু করতে হবে এবং তা অবশ্যই পিআর (অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে হতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি আমরা ‘জুলাই সনদ’-এ অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। যদি এই সনদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত না হয়, তাহলে জাতীয় নাগরিক পার্টি এর সমর্থন দেবে না।’’
নাহিদ ইসলাম ২৭ জুলাই (শনিবার) সন্ধ্যায় শেরপুর শহরের থানামোড়ে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে যেকোনো মূল্যে ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করতে হবে। ঐক্যমত কমিশন জানিয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু যদি তা না হয়, তাহলে আমরা ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র আদায় না করে শহীদ মিনার ছাড়ব না।’’
শেরপুরের প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘‘শেরপুর একটি জীববৈচিত্র্যময় এলাকা হলেও প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলে এখানে বন্যা দেখা দেয়। বন উজাড়ের কারণে বন্যহাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে, এতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। অথচ এখানে নেই মানসম্মত চিকিৎসা, নেই শিক্ষার পরিবেশ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার শেরপুর শাসন করেছে ঠিকই, কিন্তু উন্নয়ন পেয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী দোসর ও লুটেরা সন্ত্রাসীরা। যারা দেশের টাকা লুট করে এখন বিদেশে পালিয়ে আছে।’’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘‘জুলাই অভ্যুত্থানে শেরপুরের সন্তানরা শহীদ হয়েছেন, দেশের মানুষ রাজপথে নেমেছিল আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে। আমরা সেই সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের মানুষের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই।’’
এর আগে শহরের কলেজমোড়স্থ শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানামোড়ের শহীদ স্কয়ারে গিয়ে শেষ হয়।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, জাতীয় যুবশক্তির সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার লিখন মিয়া এবং যুগ্ম সমন্বয়ক আলমগীর কবির মিথুন।
এসময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং এনসিপি ও তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বিপুলসংখ্যক ‘জুলাই যোদ্ধা’ ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। এনসিপির এই কর্মসূচিকে ঘিরে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনের ছাদে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নুসরাত