
ছবি: সংগৃহীত
হঠাৎ করেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো যেন পরিণত হয়েছেন এক সাহসী নায়কে। পশ্চিমা দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়েও মার্কিন-ইসরায়েলি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তার এক ঘোষণাতেই বদলে যেতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে চলমান বহু হিসাব-নিকাশ।
ফিলিস্তিনকে নিয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ম্যাক্রোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে পশ্চিমা মিত্রদের। কিন্তু নিজের সংকল্পে অটল ফরাসি প্রেসিডেন্ট—নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে তিনি কোনো চাপের সামনেই মাথা নিচু করছেন না।
ইতোমধ্যে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন ম্যাক্রো। তিনি বলেছেন, "ফিলিস্তিনে শান্তি ও সুরক্ষা ফেরাতে যা করা প্রয়োজন, তাই করতে হবে।" তার এই স্পষ্ট ও সাহসী পদক্ষেপে স্নায়ুচাপ বেড়েছে জি-সেভেনভুক্ত দেশগুলোর ওপর।
কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তুরস্ক ও মিশরের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে ম্যাক্রো বলেন, "ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে।" আর মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে আলোচনায় তিনি স্পষ্ট জানান, "আমরা কোনভাবেই মানুষ হত্যাকে মেনে নিতে পারি না, বিশেষ করে শিশু ও ক্ষুধার্তরা যেভাবে মারা যাচ্ছে তা বর্বরতা।"
আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল 'দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা' ইস্যুতে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে সহ-আয়োজক হিসেবে থাকবে ফ্রান্স। এর আগে এক্স প্ল্যাটফর্মে (সাবেক টুইটার) এক ঘোষণায় ম্যাক্রো জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
ম্যাক্রোর এই ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করে। একইসঙ্গে দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিন্দা জানান ফ্রান্সের। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলনি বলেন, "ফিলিস্তিন এখনো রাষ্ট্র হওয়ার উপযুক্ত অবস্থানে নেই," তাই ম্যাক্রোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত নন।
ব্রিটেন থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না আসলেও, সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ম্যাক্রোর পথ অনুসরণে চাপ দিচ্ছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। গাজা ইস্যুতে ফ্রান্সকে দ্রুত শান্তি প্রচেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার, সেটিও বর্তমানে তাকে চাপের মুখে ফেলছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। সেই থেকে প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের ওপর চলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী হামলা। বিশ্বজুড়ে নিন্দা জানালেও কার্যকর উদ্যোগে পিছিয়ে রয়েছে অনেক পশ্চিমা শক্তি। তবে ১৯৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪২টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো জি-সেভেনভুক্ত কোনো দেশ হিসেবে ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চাপ বাড়বে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ও কানাডার মতো বাকি পশ্চিমা দেশগুলোর ওপরও।
শেখ ফরিদ