
ছবি: সংগৃহীত
গাজার তিনটি শহরে ১০ ঘণ্টার জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সহায়ক হবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘোষণার আড়ালে হয়তো লুকিয়ে আছে নতুন কোনো নিষ্ঠুর পরিকল্পনা।
মূল প্রশ্ন হচ্ছে—যেখানে ফিলিস্তিনিদের রক্তে হাত রঞ্জিত করেছে ইসরাইল, সেখানে হঠাৎ করে এই মানবিক ভাবমূর্তি তুলে ধরার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী?
এর আগে গত শুক্রবার কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা আলোচনা থেকে সরিয়ে নেয় নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। যুক্তি দেখানো হয়—হামাস আলোচনায় আগ্রহী নয়। অথচ বাস্তবে হামাস বারবার বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত।
ইসরাইলি বাহিনী গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে সংঘাত শুরুর পর থেকেই একাধিকবার খাদ্য, চিকিৎসা ও মানবিক সাহায্য প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়। নৃশংসভাবে চাপিয়ে দেয় দুর্ভিক্ষ। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, গত কয়েকদিনেই অনাহারে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
এই বাস্তবতায় রোববার ঘোষণা আসে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ-এর পক্ষ থেকে—
গাজা সিটি, আল-মাওসি এবং দির আল বালাহ শহরে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। এছাড়া সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ত্রাণ ও ওষুধবাহী যানবাহন চলবে নিরবিঘ্নে। ঘোষণা অনুযায়ী, মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য নতুন করিডরও চালু করা হবে।
ঘোষণার পরপরই জর্ডান ও মিশরের সীমান্ত দিয়ে গাজায় কিছু ত্রাণবাহী বহর প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
তবে এই ঘোষণাকে অনেকেই 'প্রতারণার আরেক রূপ' বলে আখ্যা দিচ্ছেন। কারণ এর আগেও ২০২৩ সালের জুন মাসে দক্ষিণ গাজায় প্রতিদিন ১১ ঘণ্টা সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ইসরাইল। কিন্তু তার পরদিনই রাফাসহ দক্ষিণ গাজার বিভিন্ন স্থানে নির্বিচার বোমা বর্ষণ করে তারা। বহু নারী-শিশু নিহত হয়।
এবারও একই ছক বাস্তবায়নের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইসরাইলের তথাকথিত মানবিক যুদ্ধবিরতি আসলে একটি ফাঁদ, যার পরিণতিতে আবারও রক্তাক্ত হতে পারে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা।
নেতানিয়াহুর প্রশাসনের ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী কৌশল আগেও গাজাকে পরিণত করেছে এক 'নরক'এ। এখন প্রশ্ন উঠছে—এই ১০ ঘণ্টার বিরতির আড়ালে ইসরাইল কি আবারও পরিকল্পনা করছে এক নিষ্ঠুর ট্র্যাজেডির?
বিশ্লেষকদের ভাষায়—ফিলিস্তিনিদের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার এখন এক দুঃস্বপ্ন। ক্ষুধা, যন্ত্রণায় মৃত্যুর অপেক্ষা যেন তাদের একমাত্র নিয়তি।
শেখ ফরিদ