ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রযুক্তি হাসপাতালে দ্বিগুণ ফি আদায়: কম্পিউটার সার্ভারে লেনদেনের প্রমাণ, তদন্তে নীরব প্রশাসন

মারুফুর রহমান, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৫, ২৭ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি হাসপাতালে দ্বিগুণ ফি আদায়: কম্পিউটার সার্ভারে লেনদেনের প্রমাণ, তদন্তে নীরব প্রশাসন

শেরপুর পৌরশহরের নারায়ণপুর এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি "প্রযুক্তি হাসপাতাল"-এ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ও স্বজনসহ সচেতন মহলের ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে।

জনকণ্ঠ প্রতিনিধির অনুসন্ধানে প্রযুক্তি হাসপাতালের বিলিং কম্পিউটার সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্য ঘেঁটে CBC, LFT, ECG, USG-সহ একাধিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একাধিক প্রমাণ মিলেছে। একই পরীক্ষার ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের রসিদের কপি সংরক্ষিত থাকায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শেরপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, “ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘনের যেকোনো অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রযুক্তি হাসপাতালের বিষয়টিও তদন্তের আওতায় আনা হবে।”

পরিবেশ অধিদপ্তর, শেরপুর-এর পরিদর্শক সুশীল কুমার দাস বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাধ্যতামূলক। যারা নিয়ম মানছে না, তারা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি। আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শেরপুর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির এক সদস্য (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “আমাদের সংগঠন সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান তা মানছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন কঠোর তদারকি জরুরি।”

ভুক্তভোগী গৃহবধূ আকলিমা বেগম (ছদ্মনাম) অভিযোগ করেন, “একই আল্ট্রাসাউন্ড পাশের ক্লিনিকে করালে ৬০০ টাকা লাগে, কিন্তু প্রযুক্তি হাসপাতালে আমাকে ১২০০ টাকা দিতে হয়েছে। বললে তারা বলে, ‘আমাদের সিস্টেম আলাদা।’ এটা কেমন সিস্টেম?”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “হাসপাতালের বাইরে মূল্যতালিকা থাকলেও সেটি মানা হয় না। টাকা না দিলে সেবাও মেলে না। এটাই এখন নিয়ম হয়ে গেছে।”প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, প্রযুক্তি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাদের বক্তব্য অসংলগ্ন ও দায়সারাভাবে দেওয়া হয়।যদিও প্রযুক্তিগতভাবে দ্বিগুণ ফি আদায়ের প্রমাণ মিলেছে, তবুও প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। এতে জনমনে প্রশ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন-এর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ও সচেতন মহলের দাবি, শুধু প্রযুক্তি হাসপাতাল নয়, শেরপুর জেলার অন্যান্য বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ তদন্ত, লিখিত অভিযোগ আমলে নেওয়া এবং নিয়মিত নজরদারি চালানো জরুরি। জনস্বাস্থ্যকে বাণিজ্যিক স্বার্থে বলি দেওয়া বন্ধ না হলে, অসহায় রোগীরা এভাবেই প্রতারণার শিকার হতে থাকবে।

আফরোজা

×