ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

নদী তীরবর্তী অসংখ্য পরিবার দুশ্চিন্তায় রাত কাটাচ্ছে

মানিকগঞ্জে পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে জিও ব্যাগ ফেলার দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৫২, ২৭ জুলাই ২০২৫

মানিকগঞ্জে পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে জিও ব্যাগ ফেলার দাবি

মালুচি গ্রামে পদ্মার ভাঙনরোধে স্থানীয়দের মানববন্ধন

পদ্মার উজান থেকে ধেয়ে আসা যমুনার বন্যার পানি ও অতি বৃষ্টির কারণে মানিকগঞ্জের ভাটি এলাকা হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর চরাঞ্চলসহ  কাঞ্চনপুর , লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগড় ও ধুলসুরা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়েছে ৪টি ইউনিয়নের অসংখ্য ঘরবাড়ি ও শতাধিক বিঘা ফসলী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে।

অব্যাহত এই ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষসহ আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দারা। ভাঙন থেকে বাঁচতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে মানববন্ধন (গণসমাবেশ) করেছে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকবাসী ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
মানিকগঞ্জের উজানে যমুনার পানি বৃদ্ধি ও অতি বৃষ্টির কারণে হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ভাঙনের মুখে মালুচি গ্রামের প্রায় ২শ’ পরিবার। দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এই পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ ফসলি জমি। জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে তাদের সহায় সম্বল রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন (গণসমাবেশ) করেছে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীসহ  বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
বন্যার পানি বৃদ্ধি ও অতি বৃষ্টির কারণে গত এক মাসের ভাঙনে  লেছড়াগঞ্জ  ইউনিয়নের চার/পাঁচটি  গ্রামের শতাধিক বিঘা ফসলি জমিসহ ঘড়বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে জয়পুর নতুন হাট, বাজার, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ শতাধিক পরিবার। পদ্মার এই ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া মাথা গোজার ঠাইটুকু রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা।
ভাঙন কবলিত হরিরামপুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচি গ্রাম ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর  এলাকার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের হাত থেকে শেষ রক্ষা পেতে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচি গ্রামের ভাঙন কবলিত মানুষেরা স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নিয়ে মানববন্ধন (গণসমাবেশ) করে দ্রুত জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন বন্ধের দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে । কেউ কেউ বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। 
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচি গ্রামের নেছা বেগম (৯০)। স্বামী-সন্তান কেউ বেঁচে নেই। মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতি লাল চাঁনের সঙ্গে থাকেন নেছা বেগম। তাদের মাত্র ১১ শতাংশ ভিটে বাড়ি । ভাঙনের মুখেই তাদের বসতবাড়ি। যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে একমাত্র সম্বল ভিটেমাটিটুকু। কিন্তু যাবে কোথায়, মাথা গোজার ঠাইও পাচ্ছেন না কোথাও। 
লেছড়াগঞ্জ  ইউনিয়নের হরহরিদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আখি বেগম জানান, আমার স্বামী রহিজ উদ্দিন  ৫ বিঘা জমি চাষ করে বিভিন্ন ফসল  ফলিয়েছিলেন। পদ্মার ভাঙনে সব নদীতে ভাসায়ে নিয়ে গেলো। এখন আমরা কি করবো কোথায় যাবো। আজিমনগর ও ধুলসুরা ইনিয়নেরও নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও  নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি। 
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর চরাঞ্চলসহ  কাঞ্চনপুর, লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর, ধুলসুরা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার এই ভাঙন রোধে  প্রতি বছরই জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্ট করা হয়।  কিন্তু এর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হরিরামপুর সদরে উপজেলা পরিষদ, থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কিছু সরকারি স্থাপনা রক্ষার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে জিওব্যাগ দিয়ে বেড়ি বাধ তৈরি করার কাজ চলছে।

যা শুধু  উপজেলা সদর রক্ষার চেষ্টাই করা হচ্ছে। উজানের কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ভাটিতে ধুলসুড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায়  বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও পদ্মার ভাঙনের কারণে কোথাও কোথাও হুমকির মুখে পড়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের বেড়িবাঁধ প্রকল্পটি।  
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচি এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার জন্য দপ্তরে জানিয়েছি। আশা করি অতিসত্বর জরুরিভাবে ঐ এলাকায় কাজ শুরু করতে পারব।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, এই এলাকার মানুষগুলো কৃষির উপর নির্ভরশীল, সামান্য কৃষি জমি ও ভিটে বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে সবাই নিঃস্ব হয়ে যাবে। জীবিকা ও মাথা গোজার ঠাইটুকুও থাকবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আগেই জানিয়েছি, তারা দেখেও গেছে। এই মুহুর্তে কাজ শুরু না করলে সব হারাতে হবে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ও পদ্মার মাঝখানে  অবস্থিত  কাঞ্চনপুর, লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর, ধুলসুরা ইউনিয়নের চরবাসী এই ভাঙন রোধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি দীর্ঘ দিনের। যখন নির্বাচন আসে তখন এই চরাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর একমাত্র দাবি থাকে এই পদ্মার চরাঞ্চলের ভাঙন রাক্ষার দাবি। কিন্তু বিগত সময়ে ক্ষমতাসীনরা  কেউই এই দাবি বাস্তবায়নে কর্যকর ভূমিকা রাখেনি। যা কিছু হয়েছে তা লোক দেখানো মাত্র।

প্যানেল হু

×