ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

শেরপুরের আগর বাগান: গারো পাহাড়ের বুকে এক নিঝুম সৌন্দর্যলোক

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ২৮ জুলাই ২০২৫

শেরপুরের আগর বাগান: গারো পাহাড়ের বুকে এক নিঝুম সৌন্দর্যলোক

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ

পাহাড় শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রকৃতির এক বিশাল সৃষ্টির প্রতিচ্ছবি। কারো কাছে এটি রহস্যের আধার, কারো কাছে নিছক সৌন্দর্য, আবার কারো কাছে নির্জনতায় হারিয়ে যাওয়ার নীরব আহ্বান। এমনই এক অপার সৌন্দর্যের নাম আগর বাগান শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম।

গারো পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই আগর বাগান, যার অবস্থান গজনি অবকাশ কেন্দ্রের ঠিক পশ্চিম পাশে। ছোট গজনি সীমান্ত সড়ক ধরে দক্ষিণে এগুলেই চোখে পড়বে বাগানের সারি সারি আগর গাছ। প্রকৃতি যেন আপন হাতে গড়ে তুলেছে এক নিসর্গময় চিত্রপট।

সরকারি উদ্যোগে ২০১২ সাল থেকে এখানে বাণিজ্যিকভাবে আগর চাষ শুরু হয়। এখান থেকে সংগ্রহ করা হয় আগরের মূল্যবান অংশ, যা থেকে তৈরি হয় আগরবাতি ও সুগন্ধি পণ্য। আগর বাগান শুধু অর্থনীতির সম্ভাবনা নয়, একই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যেরও এক বিরল উদাহরণ। বনের ভেতরেই মাঝে মাঝে দেখা মেলে বন মোরগ, কাঠবিড়ালি, শিয়াল এমনকি হাতিরও। যদিও হাতির দেখা নিয়মিত নয়, তবে তাদের উপস্থিতির ছাপ প্রকৃতিতে স্পষ্ট।

এখানে ঘুরতে আসা এক পর্যটক খাইরুল হোসেন বলেন,  আমি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় গিয়েছি, কিন্তু আগর বাগানের মতো এমন নির্জন আর শান্তিপূর্ণ জায়গা খুব কমই দেখেছি। পাহাড়, গাছপালা আর পশু-পাখির মেলবন্ধন যেন মনের গভীরে গাঁথা হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাপ মিয়া বলেন, সরকারি উদ্যোগে আগর চাষ শুরু হওয়ার পর এখানে অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি পর্যটক আসায় স্থানীয় ব্যবসাও বাড়ছে। আমরা চাই এ জায়গার সৌন্দর্য ও পরিবেশ যেন সংরক্ষিত থাকে।

এই বাগানে যারা একবার এসেছেন, তারা মুগ্ধ না হয়ে পারেননি। এর প্রাকৃতিক পরিবেশ, নিস্তব্ধতা আর অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য মনকে ছুঁয়ে যায়। তবে এ সৌন্দর্য শুধু চোখে দেখলে হবে না, মন দিয়ে অনুভব করলেই এর গভীরতা বোঝা যায়।

তবে দুঃখের বিষয় হলো, এই অপার সৌন্দর্যের পাহাড়গুলো আজ হুমকির মুখে। বৃক্ষনিধন, অপরিকল্পিত পর্যটন ও মানবসৃষ্ট আগ্রাসনে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

তবুও আগর বাগান এখনো বেঁচে আছে তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে। প্রশাসনের সঠিক তদারকি আর সচেতন মানুষের উদ্যোগ থাকলে আগামীর প্রজন্মও দেখতে পাবে এই নিঝুম সুন্দরকে। পাহাড় শুধু মাটি আর পাথর নয়, এটি প্রকৃতি ও প্রাণের এক অনবদ্য সঙ্গম। আগর বাগান তার জীবন্ত প্রমাণ।

ফারুক

×