ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

এই খাবারগুলোই কিডনির নীরব ঘাতক: ৯০% মানুষই জানে না!

প্রকাশিত: ২১:৫২, ২৭ জুলাই ২০২৫

এই খাবারগুলোই কিডনির নীরব ঘাতক: ৯০% মানুষই জানে না!

ছবি: সংগৃহীত

কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে বর্জ্য পদার্থ দূর করে। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন কিছু খাদ্যাভ্যাস অজান্তেই কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে। কিডনি রোগ প্রায়শই নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে, কারণ এর লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় না। যখন সমস্যা গুরুতর হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

এই খাবারেই কিডনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট খাবার কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। নিচে এমন কিছু প্রধান খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যা কিডনিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে:

১. উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods High in Sodium):

কেন ক্ষতিকর: আমাদের খাবারে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) কিডনির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। কিডনির কাজ হলো শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও পানি বের করে দেওয়া। যখন আমরা অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করি, তখন কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এই অতিরিক্ত লবণ দূর করার জন্য। এতে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা কিডনির রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

যেসব খাবারে বেশি থাকে: চিপস, ক্র্যাকার্স, প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, হট ডগ, বেকন), টিনজাত স্যুপ, প্রক্রিয়াজাত পনির, আচার, এবং রেডি-টু-ইট ফোজেন খাবার—এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। এমনকি আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যকর মনে হওয়া কিছু খাবার, যেমন প্রক্রিয়াজাত রুটি বা সস, এগুলোতেও উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম থাকতে পারে।

২. অতিরিক্ত চিনি এবং চিনিযুক্ত পানীয় (Excess Sugar and Sugary Drinks):

কেন ক্ষতিকর: অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ শুধু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই বাড়ায় না, এটি কিডনিরও চরম ক্ষতি করে। যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, তখন কিডনিকে রক্ত ​​থেকে অতিরিক্ত চিনি ফিল্টার করতে অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনির ফিল্টারিং ইউনিটগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

যেসব খাবারে বেশি থাকে: সফট ড্রিঙ্কস, ফলের রস (প্যাকেটজাত), এনার্জি ড্রিঙ্কস, ক্যান্ডি, প্যাস্ট্রি, এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত মিষ্টান্ন—এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যাডেড সুগার থাকে, যা কিডনির ওপর সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এমনকি কিছু ডার্ক-কালারড সোডাতে ফসফরাস অ্যাডিটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা কিডনির জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার (বিশেষ করে রেড মিট) এবং কিছু দুগ্ধজাত পণ্য (High Protein Foods, especially Red Meat & some Dairy Products):

কেন ক্ষতিকর: প্রোটিন শরীরের জন্য অপরিহার্য, তবে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ, বিশেষ করে প্রাণীজ প্রোটিন, কিডনির ওপর চাপ বাড়ায়। প্রোটিন হজমের সময় কিছু বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়, যা কিডনিকে ফিল্টার করতে হয়। কিডনি যখন ক্ষতিগ্রস্ত থাকে, তখন এই বর্জ্য পদার্থগুলো সঠিকভাবে শরীর থেকে বের হতে পারে না।

যেসব খাবারে বেশি থাকে: রেড মিট (গরুর মাংস, খাসির মাংস), প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন সালামি, বেকন) এবং কিছু দুগ্ধজাত পণ্য (যেমন পনির)—এগুলোতে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ফসফরাস থাকে, যা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে যাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেছে, তাদের জন্য এই খাবারগুলো বিপদজনক।

৪. অতিরিক্ত পটাসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ কিছু খাবার (Foods High in Potassium and Phosphorus):

কেন ক্ষতিকর: সুস্থ কিডনি অতিরিক্ত পটাসিয়াম এবং ফসফরাস শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই খনিজগুলো রক্তে জমা হতে শুরু করে, যা হার্টের সমস্যা এবং হাড়ের দুর্বলতার মতো গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

যেসব খাবারে বেশি থাকে:

উচ্চ পটাসিয়াম: কলা, কমলা, অ্যাভোকাডো, আলু, টমেটো, পালং শাক, ডাল, এবং শুকনো ফল (খেজুর, কিশমিশ, আলুবোখারা)। কিডনি রোগের নির্দিষ্ট পর্যায়ে এগুলো সীমিত পরিমাণে বা ডাক্তারের পরামর্শে খেতে হয়।

উচ্চ ফসফরাস: বাদামী চাল, গোটা গম (আটা), ডার্ক কালারের কোমল পানীয় (কোলা), দুগ্ধজাত পণ্য (দুধ, দই, পনির), বাদাম এবং বীজ।

কিডনি সুস্থ রাখতে কী করবেন?
সুষম খাদ্য: তাজা ফলমূল, শাকসবজি, এবং গোটা শস্য বেশি করে খান।

পর্যাপ্ত পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

লবণ ও চিনি সীমিত করুন: প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।

সঠিক প্রোটিন: মুরগির মাংস, মাছ এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন যেমন ডাল বা বিনস বেছে নিন।

নিয়মিত ব্যায়াম: সুস্থ ওজন বজায় রাখা কিডনির জন্য উপকারী।

চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি আপনার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত সহায়ক।

ফারুক

×