ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

দুই শিক্ষা কর্মকর্তা সামলান ২শ’ ২৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়

নুুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম/ ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ২৭ জুলাই ২০২৫

দুই শিক্ষা কর্মকর্তা সামলান ২শ’ ২৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়

দীর্ঘদিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদও খালি

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অনুমোদিত জনবলের পদের সংখ্যা ১৫টি কিন্তু তার মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। বাকি ১২টি পদ খালি। দীর্ঘদিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদও খালি। ৮ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে আছেন মাত্র দুজন, এর মধ্যে একজন আবার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে আছেন হিসাব সহকারী ও পিয়ন। 
চারজন কর্মী দিয়ে উপজেলার ২২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় তদারকি ও দাপ্তরিক কাজ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জানান সংশিষ্টরা। আবার এসব বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও শূন্য ১৭১টি পদ। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ৬১টি, সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ১১০টি। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট আর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে রয়েছে জনবল সংকট। দুই সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যালয়ে নানা কাজে ভোগান্তিতে পড়েন, দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে প্রশাসনিক কাজে। 
জানা যায়, উপজেলার ২২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫ হাজার ৭৬ জন শিশু পড়ালেখা করে। এসব বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে একজন শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও), আটজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এইও), একজন উচ্চমান সহকারী, তিনজন অফিস সহকারী, একজন হিসাব সহকারী এবং একজন পিয়নের পদ রয়েছে। ১৫টি পদের মধ্যে বর্তমানে ১১টিই খালি। ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।

বর্তমানে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এইও) ৭টি পদ খালি। অফিস সহকারীর ৪টি পদে খালি আছে তিনটি । এখন একমাত্র হিসাব সহকারী ও পিয়ন কর্মরত আছেন। 
অফিসটিতে জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ে বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। সরকারি নিয়মানুযায়ী সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত চলার আইন থাকলেও শিক্ষা অফিসের জনবল সংকটে দুর্বল তদারকির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না এই উপজেলায়।

কিছু কিছু শিক্ষক রয়েছে তার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টার এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ে আগমন ও প্রস্থান করেন নিজেদের ইচ্ছামতো। শিক্ষা অফিসের উদাসীনতার কারণে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকদের অব্যবস্থাপনায় শিশুরা শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসান মুরাদ চৌধুরী বলেন, ‘কার্যালয়ে আমরা দু’জন কর্মকর্তা রয়েছি। বৃহত্তর এ উপজেলার ২শ ২৯ টি স্কুল দুজনকে দেখভাল করতে হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের কারণে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নœয়ন বিষয়ক ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ পরিচালনাসহ যাবতীয় কাজকর্ম একা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ফলে শিক্ষা কার্যালয়ের কার্যক্রম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। শূন্য পদগুলো পূরণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, বিশাল উপজেলায় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীর এতগুলো পদ খালি থাকার পরও চলতি বছরে পাসের হার ছিল সন্তোষজনক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুর রহমান বলেন, ‘অফিসার নিয়োগ না থাকার কারণে বিষয়টি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যা সমাধান হবে।

প্যানেল হু

×