ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

শিশুর শরীরে মৃতের হৃদপিণ্ড: অস্ত্রোপচারে যুগান্তকারী সাফল্য

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৭ জুলাই ২০২৫

শিশুর শরীরে মৃতের হৃদপিণ্ড: অস্ত্রোপচারে যুগান্তকারী সাফল্য

ছবি: সংগৃহীত

মৃত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড এনে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হলো মাত্র তিন মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই ঘটনা তৈরি করেছে নতুন ইতিহাস—যেটি ভবিষ্যতে বদলে দিতে পারে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রচলিত সব ধারণা।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের একদল চিকিৎসক মৃতদেহ থেকে সংগৃহীত হৃদপিণ্ডকে এক বিশেষ পদ্ধতিতে পুনর্জীবিত করে তা সফলভাবে শিশুর দেহে স্থাপন করেন। চিকিৎসকদের ভাষায়, শিশুর শরীরে প্রতিস্থাপিত হার্টটি এখন স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে এবং সেই শিশুটিও বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে গুরুতর হার্টের জটিলতা নিয়ে মাত্র তিন মাসের ওই শিশু ভর্তি হয় হাসপাতালে। তার হৃদপিণ্ডে একাধিক সমস্যা থাকায় অপারেশনের মাধ্যমে তাকে সুস্থ করা সম্ভব হচ্ছিল না। সে সময় একমাত্র সমাধান ছিল হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন। তবে শিশুর জন্য উপযুক্ত হৃদপিণ্ড পাওয়া যাচ্ছিল না।

চিকিৎসকদের সামনে তখন আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তারা সাহসিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন—একজন মৃত ব্যক্তির হার্ট সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে তা পুনরুজ্জীবিত করে শিশুর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে।

জটিল পদ্ধতিতে অপারেশন, চ্যালেঞ্জের মুখে সাফল্য

এই জটিল ও যুগান্তকারী পদ্ধতির নাম Resuscitation of Human Organ। চিকিৎসকরা অপারেশন থিয়েটারে ‘মৃত’ হার্টকে বিশেষ যন্ত্র ও চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় আবার সচল করে তুলেছিলেন। তারপর সেটি শিশুর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। বয়সের বিশাল ব্যবধান থাকায় প্রথম ১৪ দিন ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

চিকিৎসক দলের সদস্য ডঃ অ্যারন উইলিয়াম মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘চার সপ্তাহ পার হতেই আমরা নিশ্চিত হই যে, আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি। চিকিৎসা জগতে যা আগে কখনও হয়নি, আমরা সেটা সম্ভব করেছি।’

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে হার্ট প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এক নামকরা কার্ডিওলজিস্ট ব্যাখ্যা করেন, সাধারণত মস্তিষ্কের কাজ বন্ধ হলে ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং তখনও জীবিত থাকা অঙ্গগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই ঘটনা প্রমাণ করেছে, এমনকি ‘মৃত’ ঘোষণা করা হার্টও বিশেষ পদ্ধতিতে জীবিত করে আবার কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

তবে এই পদ্ধতি কিছু নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সার্কুলেটরি ডেথ বা রক্তসঞ্চালন বন্ধ হওয়ার পর হৃদপিণ্ড পুনরুজ্জীবিত করার নৈতিকতা নিয়ে। এই বিতর্ক এড়াতে ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি সার্জন দল বিকল্প একটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে, যেখানে হৃদপিণ্ড পুনরুজ্জীবিত না করেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×