ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

শিল্পাঞ্চলে বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব, চলছে যেমন খুশি বাণিজ্য

মাসুদুর রহমান রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, আশুলিয়া, ঢাকা

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৭ জুলাই ২০২৫

শিল্পাঞ্চলে বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব, চলছে যেমন খুশি বাণিজ্য

ছবি: জনকণ্ঠ

ঢাকার উপকণ্ঠ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাজারে পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকা, মানহীন পণ্যের অবাধ বিক্রি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, ওজনে কারচুপি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য বিক্রির কারণে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত ঠকেই চলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ও বাজার তদারকিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আশুলিয়ার বাইপাইল, বলিভদ্র, ইউনিক, জামগড়া, নরসিংহপুর ও নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানগুলোতেই পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙানো নেই। যে ক’টি দোকানে মূল্য তালিকা আছে, সেখানেও প্রায়শই তা মানা হচ্ছে না। বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম হাঁকছেন, যার ফলে ক্রেতাদের জিম্মি দশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানে এই অনিয়মগুলো বেশি চোখে পড়ছে।

বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য: আশুলিয়ায় মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন পণ্য বাজার থেকে গায়েব হয়ে যায়। মূলত ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের লক্ষ্যে এসব পণ্য গুদামজাতের মাধ্যমে বাজারে তার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। ফলে বাজারে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসংকট থাকায় দ্রব্যমূল্য হয় আকাশচুম্বী। আর এত করেই চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ ক্রেতাগণ।

শুধু গুদামজাতই নয়, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়াতে যে কোনো পণ্যের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথেই সেই পণ্যের দামও বেড়ে যায়। যেমন—প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে এই অঞ্চলের ভোক্তারা। এদিনে সপ্তাহের অন্য ৫ দিনের তুলনায় মুদি বাজার, কাঁচাবাজার, মাছ, মাংসসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম অনেক হারে বেড়ে যায়। শুধু সপ্তাহের এই দুই দিন নয়, এই অঞ্চলে যেকোনো সরকারি ছুটির দিনেও এমন চিত্র দেখা যায়।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: বাজারের এসব দোকানগুলোতে খোলা পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। শুধু খোলা বাজারে বিক্রিই নয়, সেগুলো সংরক্ষণও করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে। মাছ, মাংস, ফলমূল ও সবজি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনেকেই তো রীতিমতো কেমিক্যাল দ্রব্য ব্যবহার করছে। আর এতকিছু হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। তা যেন দেখার কেউ নেই।

মানহীন ও নকল পণ্য: আশুলিয়ার বাজারগুলোর একটি বৃহৎ অংশ দখল করে রেখেছে মানহীন পণ্য। এসব পণ্য বিক্রির সময় মান অনুযায়ী দাম না নিয়ে ইচ্ছামতো দাম নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে নকল পণ্য তো আছেই। এছাড়াও রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির অভিযোগও।

ওজনে কারচুপি: বর্তমান সময়ে ডিজিটাল পাল্লার ব্যাপক প্রচলন থাকলেও এখনো অনেকে পুরনো বাটখারা ব্যবহার করছে। যেসব দোকানে ওজনে কারচুপির অভিযোগ প্রায় নিয়মিত। মূলত ওজনে কারচুপির জন্য ডিজিটাল পাল্লার পরিবর্তে এসব বাটখারা পাল্লা ব্যবহার করছেন তারা।

অন্যদিকে, মিষ্টির দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোতেও রয়েছে ব্যাপক পরিচ্ছন্নতার অভাব।

রেস্টুরেন্টগুলোতে বাসি খাবার আর এক তেলের বহু ব্যবহার তো আছেই। মিষ্টির দোকানগুলোতে হরহামেশাই মিলছে পঁচা ও নষ্ট মিষ্টি বিক্রির খবর। যদিও মাঝে মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করছে। তবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে বাইপাইল বাজারের মুদি দোকানি হানিফ মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি প্রায় ছয় বছর ধরে দোকান চালাই। ইউনিয়ন অফিসে লাইসেন্স করতে গেলে নানা ঝামেলা। শুধু টাকা দিলেই হবে না, পরিচয়পত্র, জমির কাগজ, আবার কোন জায়গায় ভাড়াটিয়া হলে মালিকের কাগজও লাগে। এই ঝামেলায় আর যাইনি।

এই প্রসঙ্গে বাইপাইলের আড়ৎ দোকানদার শাকিল আহমেদ বলেন, প্রতিদিন দাম ওঠানামা করে। সকালে এক দামে মাল আনি, বিকেলে দেখি পাইকারিতে দাম কমে গেছে বা বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় প্রতিদিন দাম লিখে তালিকা ঝুলানো হয়ে ওঠে না।

সচেতন মহল বলছেন, আশুলিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটি কেবল ক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘব করবে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। তাই তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আবুবকর সরকার বলেন—এই বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছি। আমাদের আশুলিয়ার অ্যাসিল্যান্ডও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন। বাজার মনিটরিং ভোক্তা অধিকার চালাচ্ছে, আমরাও চালাচ্ছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

×