ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই শহীদ পরিবারের জন্য বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ২৭ জুলাই ২০২৫

জুলাই শহীদ পরিবারের জন্য বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দিচ্ছে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা শহরে জুলাই ২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুটি বৃহৎ আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় মোট ২,৩৬৪টি আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। এর মধ্যে শহীদ পরিবারকে দেওয়া হবে ৮০৪টি ফ্ল্যাট এবং আহতদের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১,৫৬০টি ফ্ল্যাট। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে প্রকল্প দুটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছে এবং চলতি জুলাই মাসেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্প দুটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১০৬ কোটি টাকা, যা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই ব্যয় করা হবে।

 

 

 

শহীদ পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ ফ্ল্যাট নির্মিত হবে মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ১৪ নম্বর সেকশনে, যেখানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পাঁচ একর জমি রয়েছে। ষাটের দশকে অধিগ্রহণ করা এই জমিতে ছয়টি ১৫ তলা এবং ১২টি ১০ তলা আবাসিক ভবনে মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১,৩৫৫ বর্গফুট এবং এতে থাকবে আধুনিক স্যানিটারি ব্যবস্থা, উন্নত বৈদ্যুতিক ফিটিংস, লিফট, জেনারেটর, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা, সোলার প্যানেল এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সুবিধা। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় থাকবে কমিউনিটি ভবন, খেলার মাঠ, ওয়াকওয়ে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কালভার্ট, গভীর নলকূপ এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা। এসব অবকাঠামো নির্মাণে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থা যেমন—ডেসকো, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন দায়িত্ব পালন করবে।

অন্যদিকে আহতদের জন্য মিরপুর-৯ নম্বর এলাকায় ১,৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১,২৫০ বর্গফুট, যাতে থাকবে দুটি শয়নকক্ষ, ড্রয়িংরুম, ডাইনিংরুম, রান্নাঘর এবং তিনটি শৌচাগার। গুরুতর আহত ও পঙ্গু ব্যক্তিদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এসব ফ্ল্যাট বিশেষভাবে ডিজাইন করা হবে যেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১,৩৪৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, শহীদ পরিবারের ওয়ারিশরা বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাবেন এবং আহত ব্যক্তিরা ফ্ল্যাট পাবেন নিজেদের নামে। কারা অগ্রাধিকার পাবে, তা নির্ধারণ করবে জুলাই অধিদপ্তর, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যৌথভাবে। সরকারি তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে ‘অতি গুরুতর আহত’ হিসেবে চিহ্নিত ৪৯৩ জন এবং ‘গুরুতর আহত’ হিসেবে চিহ্নিত ৯০৮ জন রয়েছেন। এ ছাড়া মোট ১৪০১ জন আহতের মধ্যে ১৯ জন সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন এবং ৩৮২ জন একটি করে চোখ হারিয়েছেন। অনেকেই হারিয়েছেন হাত-পা। তাই ভবনের ডিজাইন এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে এসব পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনায়াসে চলাফেরা করতে পারেন।

 

 

গত ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্প দুটির ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী যে জুলাই মাসের মধ্যেই একনেক চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে। দুই প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২০২৯ সালের জুন মাসের মধ্যে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শহীদ ও আহত পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের জীবনে একটি সম্মানজনক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

সূত্র:https://youtu.be/0GtU61FWaOI?si=elf-t-l8o3PW5Zk3

ছামিয়া

×