
প্রয়াত ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী
কেবল দীর্ঘ জীবনের মধ্যেই মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে না,
বরং মহৎ কার্যাবলির জন্যই মানুষ জগতে চির অমর হয় ।
মানুষের কর্ম জীবন স্বল্প স্থানী হতে পারে আবার দীর্ঘ স্থায়ি হতে পারে। কিন্তু মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারে সারা জীবন। তেমনি একজন মানুষ ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী তিনি একাধারে চিকিৎসক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণ মানুষের অধিকার আদায়ে বন্ধু। তিনি সারা জীবন মানুষের কথা ভেবেছেন এবং মানুষের জন্য কাজ করছেন।
ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ২৭ শেষ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।বাবা মায়ের দশ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম সন্তান।
ঢাকায় বকশীবাজার নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন।১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতে রয়্যাল কলেজ থেকে এফ আরসিএস প্রাইমারি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিলেতে ডাক্তারি পড়াশোনা অবস্থান রত । মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে নিজের বিলাস বহুল জীবন ছেড়ে দেশের জন্য চলে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত হন। বাঙালি চিকিৎসকদের নিয়ে তিনি গঠন করলেন 'বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। ৪৮০ বেডের ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলেন।যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আহত মানুষের সেবা প্রদান করতেন ।
গণমানুষের কথা চিন্তা করে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২ সালে গড়ে তোলেন গণ স্বাস্থ্য কেদ্র হাসপাতাল । যার মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষের মাঝে কম খরচে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত। শুধু স্বাস্থ্য সেবার মধ্যেয় সীমাবদ্ধ নয় সমাজ বিনির্মাণে অনবদ্য ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বল্প মূল্যে মানসম্মত ওষুধ দেওয়া লক্ষ্য ১৯৮২ সালে জাতীয় ঔষধ নীতি প্রণয়ন করা হয়। যার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার এই অবদানের ফলে শুধু দেশে নয় দেশের বাইরে ও ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে। যার আন্তর্জাতিক ভাবে ও সুনাম অর্জন করেছে।
গ্রামের গরিব ও মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়। ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা সময়ের সাথে বেশ সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। খেলাধুলা ও শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু।
দেশের মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। দেশের গণতন্ত্র মুক্তি জন্য সংগ্রাম করেছেন। ফেসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় তিনি আপোসহীন ছিলেন। সবসময় সত্য ও ন্যায়ের জন্য লড়াই করেছেন।
বিশ্বজগতে অন্তত কাল প্রবাহে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই মহান মানুষটির ২০২৩ সালে ১১ এপ্রিল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ২ য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি আজকে বেঁচে থাকলে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় স্বাধীনতা দেখে যেতে পারতেন । দেশ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। কিভাবে দেশকে সুন্দর করে সাজানো যায়। বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন রাখার জন্য বিভিন্ন ভাবে সরকার কে সাহায্য করতেন ।তিনি আমাদের মাঝে আর নেই। কিন্তু তার মহৎ কার্যবলির মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন আজীবন।তার আদর্শকে অনুসরণ করে আমাদের জীবনকে সাজানো । বাংলাদেশের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মতন থাকবেন ।
জনমানুষের মধ্যেই বিচারন করবেন সব সময় ।
লেখা : শিক্ষার্থী ও সাংবাদকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
তাসমিম