
ছবি: সংগৃহীত।
প্রতিটি শিশুর চোখে থাকে জীবনের স্বপ্ন। কিন্তু গ্রামের অরক্ষিত পুকুর, ডোবা কিংবা সেচ খালে সেই স্বপ্ন যখন ডুবে যায়, তখন শুধু একটি প্রাণ নয়—হারিয়ে যায় একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।
২৫ জুলাই, বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিহার দিবস। দিবসটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কেবল শহরে নয়—গ্রামীণ কৃষিনির্ভর জীবনেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি ভয়াবহভাবে বিদ্যমান।
গ্রামবাংলায় শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে: বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে প্রায় প্রতিটি বাড়ির পাশে থাকে পুকুর, ডোবা, খাল কিংবা সেচকৃত জলাশয়। এই জলাশয়গুলো যেমন কৃষির জন্য অপরিহার্য, তেমনি তা হয়ে ওঠে সাঁতার না জানা শিশুদের জন্য এক মৃত্যু ফাঁদ।
বিশেষত ধানচাষের মৌসুমে সেচ ব্যবস্থার জন্য তৈরি খাল-বিল কিংবা গর্তে পানি জমে থাকে, যেগুলো কারো নজরেই পড়ে না—এগুলোতেই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, পানিতে ডুবে মৃত্যু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫–১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০% শিশু। এদের বড় অংশই গ্রামীণ কৃষি পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশু।
কৃষিজীবী পরিবারগুলোর করণীয়:
১. পুকুর, ডোবা বা খাল ঘেরা: শিশুর হাতের নাগালে যেন জলাধার না থাকে।
২. পুকুরপাড়ে খেলা বন্ধ: শিশুকে পানির আশপাশে খেলাধুলা করতে না দেয়া।
৩. সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক করা: পঞ্চম শ্রেণির আগেই সাঁতার শেখানো।
৪. গ্রামীণ কমিউনিটিতে সচেতনতামূলক সভা: কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি জীবন বাঁচাতেও দায়িত্বশীল হতে হবে।
কৃষি ও ডুবে মৃত্যু: সম্পর্ক আছে?
অনেকে ভাবেন, কৃষির সাথে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কী সম্পর্ক? কিন্তু বাস্তবতা হলো—যে কৃষি নির্ভরশীলতা আমাদের খাদ্য দেয়, সেই কৃষিরই এক অনিয়ন্ত্রিত জলাশয় বা খাল আমাদের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।
শুধু শিশুই নয়, ফসল কাটতে গিয়ে কৃষক, গবাদি পশু চরাতে গিয়ে কিশোর, এমনকি সেচ দিতে গিয়ে অনেক কৃষকও মৃত্যুবরণ করে পানিতে পড়ে।
প্রতিরোধেই বাঁচে প্রাণ!
স্থানীয় কৃষি অফিসগুলো ‘সচেতন কৃষক, নিরাপদ পরিবার’ শীর্ষক উদ্যোগ নিতে পারে।
সমাজিক সংগঠন গুলোর প্রচারণা ও কর্মশালা। বিদ্যালয়ের পাশে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম। পরিবারিক নিজস্ব উদ্যোগ।
সরকারি ভাবে সর্বোপরি জনসাধারণের জন্য সাঁতার শেখার ক্যাম্পেইন পরিচালনা।
আজকের এই দিনে আমাদের ভাবতে হবে—শুধু ফসল ফলিয়ে জাতিকে খাওয়ানোই কৃষির কাজ নয়, বরং কৃষিজীবী সমাজকে নিরাপদ রাখা, প্রাণ বাঁচানোও এক ধরনের মানবিক কৃষি উদ্যোগ।
আসুন, পুকুরের পানিতে ডুবে যেন আর কোনো শিশুর ভবিষ্যৎ নিভে না যায়—সে বিষয়ে প্রতিটি কৃষক পরিবার, প্রতিটি পেশাজীবী মানুষ, শিক্ষার্থীসহ সকলে দায়িত্বশীল হই। নিজ উদ্যোগে শুরু করি সাঁতার প্রশিক্ষণ। শহর ও গ্রামেগঞ্জে হয়ে উঠুক নতুন শিক্ষার পাঠশালা।
মিরাজ খান