
ছবি: জনকণ্ঠ
পুদিনা—একটি সুপরিচিত সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ, যা শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ায় না, বরং স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও অনন্য। বাংলাদেশে প্রায় সব জেলায় এই ঔষধিগাছটির চাষ সম্ভব। পুদিনা পাতার গুণাগুণ, ব্যবহার এবং চাষপদ্ধতি নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পুদিনা পাতার উপকারিতা:
হজমে সহায়তা:
পুদিনা পাতা হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে এবং বমিভাব ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
সর্দি-কাশিতে উপকারী:
পুদিনায় থাকা মেনথল ঠান্ডা ও কাশির উপশমে কার্যকর। এটি বুকে জমে থাকা কফ সহজে বের করে দেয়।
মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন: পুদিনা পাতার রস বা তেল কপালে মালিশ করলে মাথাব্যথা হ্রাস পায়।
চর্মরোগ নিরাময়:
ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস বিরোধী গুণ থাকায় ত্বকের চুলকানি ও এলার্জিতে উপকারী।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে:
পুদিনা পাতা চিবালে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যে সহায়ক হয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
চা হিসেবে:
২-৩টি তাজা পুদিনা পাতা ফুটন্ত পানিতে দিয়ে ৫-৭ মিনিট রেখে পান করুন। চাইলে মধু যোগ করতে পারেন।
রান্নায়:
ভর্তা, চাটনি, সালাদ ও স্যুপে ব্যবহার করলে স্বাদ ও সুবাস বাড়ে।
রস করে:
পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করে রস করে পান করলে হজমে সহায়ক হয়।
ত্বকে ব্যবহার:
পেস্ট করে মুখে লাগালে ব্রণ বা ফুসকুড়ি হ্রাস পায়।
পুদিনা চাষের পদ্ধতি:
জমি নির্বাচন:
পানিনিষ্কাশন ভালো এমন দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি পুদিনা চাষের জন্য আদর্শ। আংশিক ছায়াযুক্ত এলাকা ভালো ফল দেয়।
রোপণ পদ্ধতি:
পুদিনা বীজের মাধ্যমে নয়, কাণ্ড বা শিকড়সহ গাছের অংশ মাটিতে পুঁতে চাষ করা হয়। একে বলে ‘স্টেম কাটিং’।
সেচ ও পরিচর্যা:
প্রতিদিন বা একদিন পরপর হালকা পানি দিতে হয়। আগাছা পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।
সার প্রয়োগ:
জৈব সার (গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট) ভালো ফল দেয়। কীটনাশক ব্যবহার না করাই ভালো।
ফলন ও সংগ্রহ:
চারা রোপণের ৪০-৫০ দিনের মধ্যে পাতা সংগ্রহ করা যায়। পরবর্তীতে প্রতি ২০ দিন পরপর পাতা কাটা যায়।
পুদিনা পাতা যেমন সহজে চাষযোগ্য, তেমনই স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর। গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় কিংবা টবে পুদিনার চাষ করে পরিবারের স্বাস্থ্যসুরক্ষার পাশাপাশি সামান্য আয়ের উৎসও তৈরি করা সম্ভব। স্বল্পখরচে বেশি উপকার—এমন গাছ সত্যিই বিরল।
লেখকঃ বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা
সাব্বির