ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

নগরজীবনে বাড়িভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনা ও ঝামেলা: আইনি প্রতিকার জানালেন ব্যারিস্টার লিমা আঞ্জুমান

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৪:২১, ২৬ জুলাই ২০২৫

নগরজীবনে বাড়িভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনা ও ঝামেলা: আইনি প্রতিকার জানালেন ব্যারিস্টার লিমা আঞ্জুমান

ছবি: সংগৃহীত

নগরজীবনে বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের জন্য বাড়িভাড়া সংক্রান্ত সমস্যাগুলো যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতি বছর ভাড়া বাড়ানো, ভাড়াটিয়ার বারবার বলার পরেও বাসার ভেতরের নষ্ট বা ভাঙা জিনিস ঠিক না করাএসব নিয়ে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিওতে বিস্তারিত মতামত দিয়েছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার লিমা আঞ্জুমান।

তিনি বলেন, “অনেক বাড়িওয়ালা নিয়মিতভাবে ভাড়া বাড়ান, অথচ ভাড়াটিয়া বাসায় ওঠার পর বাসার ভেতরে কিছু নষ্ট বা ভেঙে গেলে মালিকরা বারবার বলা সত্ত্বেও তা ঠিক করেন না। এ নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে যেসব বাসা কম টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়, সেসব ক্ষেত্রে মৌখিক চুক্তিতেই সবকিছু মিটে যায়।”

মৌখিক চুক্তির ফাঁদে ভাড়াটিয়া

লিমা আঞ্জুমান বলেন, অনেক সময় কম টাকার বাসাগুলোর ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে ভাড়া নির্ধারণ করেন। এতে পরে দেখা যায়, ভাড়াটিয়া বাসায় উঠে যাওয়ার পর বাড়িওয়ালা আর কোনো কিছুই শুনতে চান না। বাড়ির ভেতরে কিছু নষ্ট হলে একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও তা ঠিক করা হয় না। ভাড়াটিয়ার ভোগান্তি বাড়তেই থাকে।

লিখিত চুক্তি কেন জরুরি?

এই আইনজীবীর মতে, যেকোনো বাসায় ওঠার আগে একটি লিখিত চুক্তি (Agreement) করা অত্যন্ত জরুরি, সেটা ৩০০, ৫০০ বা ৮০০ টাকার স্ট্যাম্পেই হোক না কেন। এই চুক্তিতে বাসার মালিক ও ভাড়াটিয়ার পূর্ণাঙ্গ তথ্য, সাক্ষী এবং পরিষ্কারভাবে উল্লেখযোগ্য শর্তাবলি থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

যেমন:

  • কত মাসের ভাড়া,
  • বাড়িভাড়া কতদিন পর বাড়ানো যাবে,
  • বাসার কোনো কিছু নষ্ট হলে দায় কার,
  • কীভাবে ঠিক করা হবে এবং খরচ বহনের নিয়ম ইত্যাদি।

আইনি দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন’ অনুসারে, বাড়িওয়ালা দুই বছরের আগে কোনো অবস্থাতেই ভাড়া বাড়াতে পারবেন না। এমনকি ভাড়া বাড়ালেও তা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এই আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হয় না।

সমস্যার সমাধান কী?

আইনি পথে সমাধান পাওয়া সম্ভব হলেও তা সময়সাপেক্ষ এবং ঝামেলাপূর্ণ। তাই শুরুতেই লিখিত চুক্তি, দুই পক্ষের সাক্ষী এবং মাসিক ভাড়ার রসিদ আদান-প্রদান নিশ্চিত করাই সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ পদক্ষেপ।

যদি চুক্তিতে উল্লেখ থাকে যে কোনো কিছু নষ্ট হলে ভাড়াটিয়া নিজে মেরামত করে তার খরচ ভাড়ার টাকা থেকে সমন্বয় করতে পারবে, তবে ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোনো বিরোধ হবে না।

বাড়িওয়ালাদের দায়িত্বও কম নয়

এই সমস্যা কেবল ভাড়াটিয়ার একতরফা নয়, বাড়িওয়ালারও কিছু মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে। লিখিত চুক্তি থাকলে কোনো ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে নিয়ম মেনে উচ্ছেদ নোটিশ দিতে পারবে বাড়িওয়ালা। চুক্তি না থাকলে উচ্ছেদ প্রক্রিয়াও হয়ে যায় জটিল এবং অনেক সময় থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।

সমাধান: নিয়ম মেনে চলা

প্রতিটি ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার উচিত শুরুতেই সঠিক নিয়মে একটি চুক্তি সম্পাদন করা এবং নিয়মিতভাবে ভাড়ার রসিদ প্রদান ও গ্রহণ করা। এতে উভয় পক্ষেরই ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা ও ভোগান্তি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব বলে জানান ব্যারিস্টার লিমা আঞ্জুমান।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=8rFJjM-1pO4

রাকিব

×